চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ অথবা আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে যমুনা নদীর ওপর নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতুর উদ্বোধন করা হবে। তবে শুরু থেকে কম্পিউটারভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় সংকেত ব্যবস্থা বা কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলিঙ্ক সিস্টেম (সিবিআইএস) চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে প্রথম দিকে সেতুতে পূর্ণগতি অর্থাৎ ১২০ কিলোমিটার বেগ পাওয়া নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গড়িমসি এবং ভারত থেকে প্রযুক্তিপণ্য আমদানিতে জটিলতার কারণে সেতুর দুই পাশের স্টেশনে শুরু থেকে সিবিআইএস চালু করা যাচ্ছে না। ফলে এ সময়টাতে ট্রেনের গতি অনেক কম থাকবে। আগামী বছরের মার্চ মাসের মধ্যে সিবিআইএস চালু করা সম্ভব হবে।
রেলওয়ের তথ্যমতে, ডব্লিউডি-১ ও ডব্লিউডি-২ নামে দুটি প্যাকেজে পাঁচটি জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। সেতুর উভয় প্রান্তের দুই স্টেশনে ডব্লিউডি-৩ নামে অপর একটি প্যাকেজের আওতায় সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপনের কাজ করা হচ্ছে।
সিবিআইএস চালু করার কাজে জাপানি বহুজাতিক শিল্প প্রতিষ্ঠান হিটাচির সহায়তা নিচ্ছে রেলওয়ে। ভারতে হিটাচির পণ্য উৎপাদন কারখানা থাকায় জাপানি ঠিকাদাররা সেখান থেকেই পণ্য আমদানি করছিলেন। সম্প্রতি ঠিকাদাররা সেখান থেকে পণ্য আমদানি করতে কিছু জটিলতায় পড়েছেন।
সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান বলেন, নতুন সেতু দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সেতু উদ্বোধন হলেও কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলিঙ্ক সিস্টেম (সিবিআইএস) চালু করতে আরও দুই-তিন মাস সময় লাগতে পারে। আশা করি, মার্চ নাগাদ সিবিআইএস চালু হবে। আপাতত প্রথাগত নন-ইন্টারলিঙ্ক ব্যবস্থায় ট্রেন চালাতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলিঙ্ক সিস্টেম (সিবিআইএস) চালু না হলে পশ্চিমাঞ্চলের রেলপথে নিরাপত্তাগত শঙ্কা থেকে যাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের শুরুতে সিগন্যাল সিস্টেমের ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত ছিল। যে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ট্রেনের গতি বাড়িয়ে শিডিউল বিপর্যয় কমানো, সেখানে নন-ইন্টারলিঙ্ক সিস্টেম চালু থাকলে যাত্রীসেবার মান বিন্দুমাত্র বাড়বে না। এতে রেলপথে যাত্রীঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।
রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, সিবিআইএস চালুর বিষয়টি প্রকল্প পরিচালক ভালো বলতে পারবেন। তবে এটা সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। দেরি হলে ১৫ দিন থেকে এক মাসের বেশি সময় লাগবে না।
২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
২০২১ সালের মার্চে রেলসেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। রেলসেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি শতকরা ৯৮ ভাগ।
সেতুটি নির্মাণে প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। পরে সেটা বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় দাঁড়ায়।
Views: 10
Leave a Reply