1. nasiralam4998@gmail.com : admi2017 :
মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৪১ পূর্বাহ্ন

বুকে গুলি নিয়ে ৩৯ দিন, অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানলেন শোহান

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৪
  • ১০ বার

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে ঢাকার রামপুরায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন শোহান শাহ (২৯)। বুকে গুলি নিয়ে ৩৯ দিন লড়াই করে অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মেনেছেন তিনি।

শোহান শাহের বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা সদরের আলতাফ হোসেন মহিলা কলেজ রোড এলাকায়। শোহানকে হারিয়ে এখন পরিবারের সদস্যরা পড়েছেন অকুল পাথারে।

জানা যায়, অল্প বয়সেই সংসারের হাল ধরেছিলেন শোহান শাহ। মা-বাবা, স্ত্রী ও স্কুলছাত্র ছোট ভাইয়ের সব খরচের জোগান আসত একজনের বেতন থেকেই। পরিবারের সবার ভরসা ছিলেন তিনি। অর্থ সাশ্রয়ের জন্য স্ত্রীকে বাড়িতে মা-বাবার কাছে রেখে ঢাকায় মেসে থেকে চাকরি করছিলেন। গ্রামের বাড়িতে নতুন ঘরও নির্মাণ করা হচ্ছিল। যেখানে স্ত্রী শম্পা বেগমের সঙ্গে সুখের সংসার পাততে চেয়েছিলেন শোহান শাহ। তবে তাদের সেই স্বপ্ন অপূরণ থেকে গেল।

গত ১৯ জুলাই ঢাকার রামপুরা সিএনজি পাম্প এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন শোহান। এর ৩৯ দিন পর ২৭ আগস্ট ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। বুধবার (২৯ আগস্ট) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শোহানের মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে ওই দিন বিকেলে শ্রীপুর গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।

পরিবারের সদস্যরা জানান, মাগুরার শ্রীপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে প্রায় ১০ বছর আগে সংসারের হাল ধরতে চাকরিতে যোগ দেন শোহান। সর্বশেষ ঢাকার রামপুরা এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি। তার বাবা শাহ সেকেন্দার এক দশকের বেশি সময় আগে নিজের ব্যবসা গুটিয়ে বেকার হয়ে পড়েন। তার একমাত্র ছোট ভাই অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে।

শোহানের স্ত্রী শম্পা বেগম জানান, ২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর তাদের বিয়ে হয়েছিল। এর মধ্যে তিন বছর দুজন একসঙ্গে ঢাকায় সংসার পেতেছিলেন। বাকি সময় অর্থসংকটের কারণে তাকে গ্রামের বাড়িতে মা-বাবার কাছে রেখে ঢাকায় চাকরি করছিল শোহান।

অর্থের কারণে দুজন একসঙ্গে থাকতে পারেননি উল্লেখ করে শম্পা বলেন, শোহান বাড়িতে একটি নতুন ঘর দিচ্ছিল। সে বলেছিল, শম্পা আমি আর তুমি এই ঘরে থাকব।

গত মঙ্গলবার সিএমএইচে স্বামীর সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল শম্পার। তখন শোহান শম্পাকে বলেছিল, তুমি কেঁদো না। আমার কিছুই হবে না। তবে শোহান আর ফেরেননি। অস্ত্রোপচার করে শরীর থেকে বুলেট বের করা গেলেও রক্ত বন্ধ করা যায়নি। ১৮ ব্যাগ রক্ত দিয়েও বাঁচানো যায়নি শোহানকে।

সংসারে অভাব থাকলেও ভালোবাসার কমতি ছিল না উল্লেখ করে শম্পা বলেন, স্বামী ছাড়া কেউ নেই আমার। সে সব সময় সব ধরনের পরিস্থিতিতে আমার পাশে থেকেছে। সে বলত, চিন্তা করো না, আমি তোমার পাশে আছি। আল্লাহ আমাকে একটা সন্তানও দেননি। আমি এখন কীভাবে বাঁচব?

শোহানের বাবা শাহ সেকেন্দার বলেন, আমার ছেলেটা ছোট থেকেই কর্মঠ আর দায়িত্বশীল। ছোটবেলা থেকেই ইনকাম করে। বিশেষ করে বিয়ের পর একদিনও বসে থাকেনি। চাকরি না থাকলে বাড়িতে এসে রাজমিস্ত্রির কাজও করেছে। আমার পকেট খরচও সে দিত। যেদিন মারা গেল সেদিন সকালেও বিকাশে আমাকে এক হাজার টাকা পাঠিয়ে বলল, এই টাকাটা তুলে চলে আসেন।

শোহানের মা সুফিয়া বেগম বলেন, আমার ছেলে আমার মনের কথা বুঝত। কোনো কথা লুকালে ও বুঝে ফেলত। টাকা পাঠিয়ে বলত, মা তুমি আঁচলে গুঁজে রেখো না, যা লাগে কিনে খাও আমি আছি তো। আমার ইনকাম না খেয়ে তোমাদের মরতে দেব না।

শোহানের সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা জানান, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর শোহানকে প্রথমে বেটার লাইফ হাসপাতালে নিয়ে যান তার দুই সহকর্মী। সেখান থেকে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে এক্স-রে করে বুকে গুলি থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ভর্তি নেয়নি। কারণ তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংঘর্ষ চলছিল। প্রায় ১২ ঘণ্টা আরও কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ঘুরে ভোর সাড়ে ৪টার দিকে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শোহানকে। সেখানে ওই দিনই ছোট একটা অস্ত্রোপচার করা হয়। তবে শরীরে গুলি থেকে যায়। পরে সেখান থেকে তাকে সিএমইচে রেফার্ড করা হয়।

Views: 1

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..