1. nasiralam4998@gmail.com : admi2017 :
মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫৩ পূর্বাহ্ন

ইসলামী ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের নামে বেনামে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৪
  • ২২ বার

শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ব্যাংক খাতে ঋণ কেলেঙ্কারি, দখল, লুটপাট ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। ইসলামী ব্যাংকসহ প্রায় ৮টি ব্যাংক দখলে নেয় এস আলম গ্রুপ। এসব ব্যাংক দখলে নেওয়ার পর থেকে নামে বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয় এস আলম গ্রুপ। শুধু ঋণ নয় এসব ব্যাংকের মালিকানা নিজেদের কব্জায় রাখতে ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের নামে-বেনামে কোম্পানি খুলে শেয়ার ধারণ করেছে প্রভাবশালী গ্রুপটি।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মুখে হঠাৎ করে শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করার পর ইসলামী ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের নগদ টাকা সরাতে গিয়ে ব্যর্থ হয় এস আলম গ্রুপ। এখন গ্রুপটি তাদের নামে বেনামে থাকা শেয়ার বিক্রি করে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এমনটিই অভিযোগ করছে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডাররা।

শেয়ারহোল্ডারদের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শুধুমাত্র ইসলামী ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের নামে বেনামে ২৪টি ব্যক্তি ও কোম্পানির ৮২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। সরকার পতনের পর শেয়ার বিক্রি করে অর্থ লুট করার পাঁয়তারা করছে এস আলম গ্রুপ। এসব অর্থ বের করে নিয়ে শেয়ারবাজার বড় ধরনের পতন হয়ে তলানিতে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এম পরিস্থিতিতে প্রভাবশালী এই গ্রুপটির শেয়ার বিক্রি ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শেয়ারহোল্ডার, বিনিয়োগকারীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক একটি শক্তিশালী ব্যাংক ছিলো। এস আলম গ্রুপ দখল করে ব্যাংকটিতে ঋণসহ অনিয়মের মাধ্যমে লুটপাট করেছে। নামে বেনামে ঋণ নিয়ে ব্যাংকটি দুর্বল করে ফেলেছে। এখন সরকারের প্রথম কাজ হবে ব্যাংকটিকে দখল মুক্ত করা।’

তিনি বলেন, ‘ব্যাংকটি দখলে রাখতেই তারা শেয়ার কিনেছে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে এই শেয়ারগুলো কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েই কিনেছে। অর্থাৎ ব্যাংকের টাকা দিয়েই ব্যাংকের শেয়ার কিনেছে। আবার এই ব্যাংকের শেয়ার লিয়েন রেখে অনেক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে। এখন কোনো টাকাই পরিশোধ করছে না। তাই এসব বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ সংস্থার তদন্ত করে তাদের ঋণের বিপরীতে শেয়ার জব্দ করা উচিত। একই সঙ্গে ব্যাংকটি দখল মুক্ত করতে হলে মালিকানা পরিবর্তন করতে হবে। এজন্য শেয়ার হস্তান্তর বা বিক্রি করতে হবে। এখন আমাদের দেখতে হবে তারা যখন শেয়ার হস্তান্তর বা বিক্রি করছে এই শেয়ার কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কিনছে। এসব শেয়ারের ক্রেতারা কি আবার এস আলম গ্রুপের নামে বেনামের কোম্পানি বা ব্যক্তি কিনা এ বিষয়ে আমাদের শেয়ারহোল্ডার, বিনিয়োগকারী ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থার সতর্ক থাকতে হবে।’

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুয়ায়ী, দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইসলামী ব্যাংকের বর্তমানে শেয়ার সংখ্যা ১৬০ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার ৬৬৮ টি। এসব শেয়ারের মধ্যে এস আলমের নামে-বেনামে ২৪ ব্যক্তি ও কোম্পানির নামে শেয়ার আছে প্রায় ৮২ শতাংশ বা ১৩১ কোটি ৮৯ লাখ ১২ হাজার শেয়ার। এসব শেয়ার বিক্রি করে অর্থ বের করে নেওয়ার চেস্টা করছে এস আলম গ্রুপ। যার বর্তমান বাজার মূল্য (রোববার, ১৮ আগস্ট ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার সর্বশেষ ৪০ টাকা ৯০ পয়সা বেচাকেনা হয়েছে) ৫ হাজার ৩৯৯ কোটি ৫৮ লাখ ৬৭ হাজার টাকা।

যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে শেয়ার ধারনের তথ্য পাওয়া গেছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসানুল আলম। তিনি জিএমজি বিল্ডার্স থেকে মনোনীত পরিচালক। তার নামে ব্যাংকটির ২ দশমিক ০১০ শতাংশ বা ৩ কোটি ২৩ লাখ ৬০ হাজার ৮১২ টি শেয়ার রয়েছে। এছাড়া ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান ইউসিফ আব্দুল্লাহ আল রাজি। তিনি বিটিএ ফাইন্যান্স লিমিটেড থেকে মনোনীত। যার নামে ৪ দশমিক ৯৫৩৬ শতাংশ বা ৭ কোটি ৯৭ লাখ ৫১ হাজার ৭৭৮টি শেয়ার রয়েছে। ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান ড. তানভীর আহমেদ প্যারাডাইস ইন্টারন্যাশনালের মনোনীত। প্রতিষ্ঠানটির নামে ২ দশমিক ০০৯৯ শতাংশ বা ৩ কোটি ২৩ লাখ ৬০ হাজার শেয়ার রয়েছে।

ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন এবিসি ভেঞ্চার্স লিমিটেড থেকে মনোনীত। প্রতিষ্ঠানটির নামে ২ দশমিক ০০৬৩ শতাংশ বা ৩ কোটি ২৩ লাখ এক হাজার ৩০টি শেয়ার রয়েছে।  এক্সেল ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিংয়ের মনোনীত পরিচালক প্রফেসর ড. মো. সিরাজুল করিম। প্রতিষ্ঠানটির নামে ৩ দশমিক ৩৯৭২ শতাংশ বা ৫ কোটি ৪৬ লাখ ৯৩ হাজার ৯১৪টি শেয়ার রয়েছে। প্লাটিনাম এনডেভার্স লিমিটেডের মনোনীতি পরিচালক প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল আলম। প্রতিষ্ঠানটির নামে ২ দশমিক ০০৫৩ শতাংশ বা ৩ কোটি ২২ লাখ ৮৫ হাজার শেয়ার রয়েছে। এক্সেলশিয়র ইমপেক্স কোম্পানি লিমিটেডের মনোনীতি পরিচালক সৈয়দ আবু আসাদ। প্রতিষ্ঠানটির নামে শেয়ার রয়েছে ২ শতাংশ বা ৩ কোটি ২২ লাখ ৩৩৪টি। গ্র্যান্ড বিজনেস লিমিটেডের মনোনীতি পরিচালক মো. কামরুল হাসান। প্রতিষ্ঠানটির নামে ২ দশমিক ০২১৬ শতাংশ বা ৩ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৫ টি শেয়ার। লায়ন হেড বিজনেস রিসোর্সেস লিমিটেডের মনোনীত  পরিচালক খুরশীদ উল আলম। প্রতিষ্ঠানটির দখলে রয়েছে ২ দশমিক ০০০২ শতাংশ বা ৩ কোটি ২২ লাখ ২৯০০টি শেয়ার। বিএলইউ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের মনোনীত পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন।  এই প্রতিষ্ঠানের নামে রয়েছে ২ দশমিক ০০৯৯ শতাংশ বা ৩ কোটি ২৩ লাখ ৬০ হাজার শেয়ার।  আর্মাদা স্পিনিং মিলস লিমিটেডের মনোনীত পরিচালক আবু সাঈদ মোহাম্মদ কাশেম। প্রতিষ্ঠানটির নামে ২ দশমিক ০১৩০ শতাংশ বা ৩ কোটি ২৪ লাখ ৮ হাজার ৩৩৯টি শেয়ার রয়েছে। কিংসওয়ে এনডেভার্স লিমিটেডের মনোনীত পরিচালক শওকত হোসাইন। প্রতিষ্ঠানটির নামে রয়েছে ৪ দশমিক ৩৯৭৫ শতাংশ বা ৭ কোটি ৭৯ লাখ ৯ হাজার ৮৭০টি শেয়ার।  ইউনিগ্লোভ বিজনেস রিসোর্সেস লিমিটেডের মনোনীত পরিচালক জামাল মোস্তফা চৌধুরী। কোম্পানির নামে রয়েছে ৪ দশমিক ৬৭১০ শতাংশ বা ৭ কোটি ৫২ লাখ ২ হাজার ১৪০টি শেয়ার।

যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে শেয়ার ধারন করা হয়েছে সেগুলো হলো- সোলিড ওক ইন্সুরেন্স পিসিসি লিমিটেডের নামে ৪ দশমিক ৮৮৯৫ শতাংশ বা ৭ কোটি ৮৭ লাখ ২০ হাজার শেয়ার, হলিস্টিক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের নামে ৪ দশমিক ৮৮৮২ শতাংশ বা ৭ কোটি ৮৬ লাখ ৯৮ হাজার ৮৩২টি, হাইক্লাস বিজনেস এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের নামে ৪ দশমিক ৮৪৪৭ শতাংশ বা ৭ কোটি ৭৯ লাখ ৯৯ হাজার ৯১০ টি, ক্যারোলিনা বিজনেস এন্টারপ্রাইজের নামে ৪ দশমিক ৮১৮৩ শতাংশ বা ৭ কোটি ৭৫ লাখ ৭৪ হাজার ৫৯৫ টি, ব্রিলিয়ান্ট বিজনেস কোম্পানি লিমিটেডের ৪ দশমিক ৮১৬০ শতাংশ বা ৭ কোটি ৭৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৯৩টি, ব্রডওয়ে ইম্পেক্স কোম্পানি লিমিটেডের নামে ৪ দশমিক ৭৫৬২ শতাংশ বা ৭ কোটি ৬৫ লাখ ৭৪ হাজার ৬৫০ টি, পিকস বিজনেস এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের নামে ৪ দশমিক ৫০৫৬ শতাংশ বা ৭ কোটি ২৫ লাখ ৪০ হাজার, এভারগ্রীণ শিপিং লিমিটেডের ৪ দশমিক ১৮১২ শতাংশ বা ৬ কোটি ৭৩ লাখ ১৬ হাজার ৪৫৫টি, ম্যারাথন ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ৩ দশমিক ৯৩৫১ শতাংশ বা ৬ কোটি ৩৩ লাখ ৫৫ হাজার ৪৩৪টি, কিংস্টোন ফ্লাওয়ার মিলস লিমিটেডের নামে ২ দশমিক ৫১২২ শতাংশ বা ৪ কোটি ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৯৮৬ টি, পারসেপ্টা এনডের্ভাস লিমিটেডের নামে ২ দশমিক ২৭৮১ শতাংশ বা ৩ কোটি ৬৬ লাখ ৭৬ হাজার ৪৫৮ টি শেয়ার রয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এস আলম গ্রুপের নামে বেনামে প্রতিষ্ঠানগুলো ইসলামী ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের নগদ টাকা চেকের মাধ্যমে উঠিয়ে নিতে গেলে ব্যাংকটি কর্মকর্তারা তা আটকে দেয়। তখন এস আলমের পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নেন কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এতে ইসলামী ব্যাংকের সামনে গুলাগুলির ঘটনাও ঘটে। ফলে নগদ টাকা সরাতে পারেনি এস আলম গ্রুপ।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর কাছে শেয়ারহোল্ডারদের অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘শুরু থেকে আমরা ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার হোল্ডার, বিগত বছরগুলোতে দেশের ব্যাংকিং খাত এক বিশেষ অবস্থার মধ্য দিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে নিয়েছে। এস আলম গ্রুপ দেশের প্রচলিত আইন কানুনকে অত্যন্ত সুকৌশলে পাশ কাটিয়ে বিভিন্ন অবৈধ পন্থা ও প্রভাবের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে বিনিয়োগ বা ঋণ সৃষ্টির মাধ্যমে সেই অর্থ দিয়ে দেশ এবং বিদেশের একাধিক কোম্পানির মাধ্যমে শেয়ার ক্রয় দেখিয়ে ব্যাংকের মালিকানা নিজেদের কাছে নেয়। একই প্রক্রিয়ায় ইসলামি ব্যাংকের দীর্ঘদিনের শেয়ার হোল্ডারদের ধারনকৃত শেয়ারগুলো বিক্রি করতে বাধ্য করে এস আলম গ্রুপ। এসব শেয়ার ধারনের মাধ্যমে ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি মতো রাষ্টের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকের মোট শেয়ারের প্রায় ৮২ শতাংশ নিজেদের মধ্যে কুক্ষিগত করে এস আলম।’

অভিযোগে আরও বলা হয়, গত ৫ আগষ্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপ্লবের মাধ্যমে নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। এ অবস্থায় একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং দেশের অর্থনীতির স্বার্থে বিগত দিনের ফ্যাসিবাদী শাসনের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোতে এস আলম গ্রুপের নামে বেনামে ধারন করা তাদের শেয়ারগুলো যাতে তদন্তের পূর্বে বিক্রি করতে না পারে সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিএসইসির হস্তক্ষেপ চায় শেয়ারহোল্ডাররা (যা একদিকে অবৈধ পন্থা ও প্রভাবের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে বিনিয়োগ/ঋণ সৃষ্টির মাধ্যমে সেই টাকা দিয়ে ক্রয়কৃত এবং অন্যদিকে বৈধ শেয়ারধারীদেরকে শেয়ার বিক্রিতে বাধ্য করার মাধ্যমে অর্জন করা শেয়ার)। ইসলামী ব্যাংকের লাখ লাখ আমানতকারী এবং সাধারণ শেয়ার হোল্ডারদের স্বার্থে দ্রুত ব্যবস্থা নিতেও দাবি জানায় শেয়ারহোল্ডাররা।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, আইন অনুযায়ী তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানির একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শেয়ার একক কোনো গ্রুপ বা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির হাতে রাখতে পারে। যদি আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোনো গ্রুপ ৮২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করে আর তার প্রমাণ পায় কমিশন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বিএসইসি।

জানা গেছে, প্রভাবশালী এ গ্রুপটিকে ব্যাংক লুটপাট ও শেয়ার কেলেঙ্কারিতে সহায়তা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও বিএসইসি সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম। তারা দুজন সরকার পতনের পর পদত্যাগ করলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার।

জানা গেছে, এক দশক আগেও দেশের শীর্ষ ব্যাংক ছিলো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি। নিয়মনীতি পরিপালন, গ্রাহককে সেবা দেওয়া ও আর্থিক সূচকে অন্য সব ব্যাংককে ছাড়িয়ে গিয়েছিল এই ব্যাংক। গ্রাহকের আস্থার কারণে স্থানীয় আমানত কিংবা বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহে এটি সবচেয়ে এগিয়ে ছিলো। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে ২০১৭ সাল থেকে। ওই বছর সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ইসলামী ব্যাংককে ‘জামায়াতমুক্ত’ করার উদ্যোগ হিসেবে এর মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নেয় এস আলম গ্রুপ। এরপর সাড়ে সাত বছরে নামে-বেনামে ব্যাংকটি থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এই ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও এর স্বার্থসংশ্লিষ্ট রাজশাহীর নাবিল গ্রুপ। এই অর্থ ব্যাংকটির মোট ঋণের এক–তৃতীয়াংশ। এই টাকা বের করতে কোনো নিয়মকানুন মানা হয়নি। ঋণের যে তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে, ব্যাংক থেকে পাচার করা অর্থের প্রকৃত পরিমাণ তার চেয়ে বেশি বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

তথ্যমতে, ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ যখন ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয়, তখন এটিতে এস আলমের তিনটি প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ ছিলো ৩ হাজার ৬ কোটি টাকা। চট্টগ্রামে ব্যাংকটির খাতুনগঞ্জ শাখার গ্রাহক ছিলেন তিনি। তখন ব্যাংকের মোট ঋণ ছিলো ৬১ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা আর আমানত ছিলো ৬৮ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। কর্মকর্তা ছিলেন ১০ হাজারের কম। নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর আমানত বাড়ানোর লক্ষ্যে নতুন নতুন শাখা খুলে পটিয়ার লোকদের নিয়োগ দেওয়া শুরু হয়। ফলে সারা দেশে ব্যাংকটির শাখা এখন ৩৯৫টি। এর বাইরে রয়েছে ২৫০টি উপশাখা। ২০২৩ সাল শেষে ইসলামী ব্যাংকে আমানত বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা ও ঋণ ১ লাখ ৬০ হাজার ২৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ আমানতের চেয়ে বেশি টাকা ঋণ হিসেবে বের করে দিয়েছে ব্যাংকটি। বাড়তি এই টাকা এসেছে মূলত বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে।

ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ মূলক মূলধন ১০ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। ফলে একটি গ্রুপকে ইসলামী ব্যাংক সর্বোচ্চ ফান্ডেড ১ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা ও নন–ফান্ডেড ঋণ ১ হাজার ৪২ কোটি টাকা ঋণ দিতে পারে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে একটি গ্রুপ ঋণ পেতে পারে ২ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা। হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণের টাকা পাচার করতে তাই এস আলম গ্রুপ একাধিক গ্রুপ তৈরি করেছে, ভিন্ন ভিন্ন নামে প্রতিষ্ঠান খুলেছে।

প্রাপ্ত নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এস আলম নাম যুক্ত আছে ইসলামী ব্যাংক থেকে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ ১৪ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। আর সাইফুল আলমের মেয়ের স্বামী বেলাল আহমেদের ইউনিটেক্সের ঋণ ৪৫৪ কোটি টাকা। এর বাইরে এস আলম–সংশ্লিষ্ট ঋণের পরিমাণ ৩২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। এসব ঋণ ছড়িয়ে আছে চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও রাজধানীর বিভিন্ন শাখায়। এছাড়া রাজশাহীর নাবিল গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঋণ ৩ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা।

সরকার পতনের পর গত ৬ আগস্ট এস আলমের নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের ব্যাংক থেকে বের করে দেয় বিক্ষুব্ধ ব্যাংকাররা। এরপর গত ৭ এবং ৮ আগস্ট ব্যাংকারদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক দখলের পর হওয়া পদায়ন পাওয়া এক্সিকিউটিভসহ (নির্বাহী কর্মকর্তারা) যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের নিয়োগ বাতিলের দাবি করেন। এ অবস্থায় এস আলমের আমলে পদোন্নতি পাওয়া অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) কায়সার আলী ব্যাংকে আসলে তাকে জোর করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।

Views: 5

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..