1. nasiralam4998@gmail.com : admi2017 :
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৫ অপরাহ্ন

হিন্দুদের বাড়িঘর–মন্দিরে হামলা নিয়ে বিবিসির অনুসন্ধানে যে তথ্য উঠে এলো

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৪
  • ৩২ বার

ভিডিওগুলো অত্যন্ত বেদনাদায়ক-কোনোটিতে বাড়িঘর আগুনে জ্বলছে, কোনোটিতে ভয়ানক সহিংসতা, কোনোটিতে আবার সহায়তা চেয়ে নারীদের ক্রন্দনের দৃশ্য।

এসব ভিডিও যারা ছড়াচ্ছেন তাদের বক্তব্য—দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আকস্মিক পতনের পর বাংলাদেশে ‘হিন্দু গণহত্যার’ প্রমাণ এগুলো। স্টিফেন ইয়াক্সলে–লেনন এই ব্যক্তিদের একজন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টমি রবিনসন নাম ব্যবহার করেন তিনি। লেনন ব্রিটিশ উগ্রপন্থী কর্মী। যুক্তরাজ্যে সংঘটিত দাঙ্গার সময় উত্তেজনা সৃষ্টিকারী পোস্ট দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি। এখন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নিয়ে ভুয়া ভিডিও যারা ছড়াচ্ছে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন তিনি। তার ভিডিওতে সতর্কবার্তাও থাকছে।

হাসিনা সরকার পতনের পর সংখ্যালঘুদের ওপর মুসলিমদের হামলার দাবি করে যেসব ভিডিও ছড়ানো হচ্ছে সেগুলোর কিছু অংশের সত্য–মিথ্যা যাচাই করেছে বিবিসি। রোববার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব অনেক ভিডিও-ই ভুয়া।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের বিজয় উদ্‌যাপন সহিংসতায় রূপ নেয়। দাঙ্গাকারীরা ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের নিশানা করেছিল। এই দলটিতে নেতা-কর্মী হিসাবে হিন্দু–মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের সদস্যরা রয়েছেন।

মাঠপর্যায়ে খবর নিয়ে জানা গেছে, এ সহিংসতা ও লুটের প্রভাব পড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ও সম্পত্তির ওপর। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ ভারতে উগ্রপন্থী ইনফ্লুয়েন্সাররা এ নিয়ে ভুয়া ভিডিও ও তথ্য ছড়িয়েছেন। তাদের দাবি, ‘ইসলামপন্থী মৌলবাদীরা’ হিন্দুদের বিরুদ্ধে ‘সহিংস এজেন্ডা’ নিয়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চালিয়েছেন।

ভাইরাল হওয়া এক পোস্টে একটি মন্দিরের ছবি জুড়ে দিয়ে দাবি করা হয়, এতে ‘বাংলাদেশের ইসলামপন্থীরা’ অগ্নিসংযোগ করেছে।

‘বিবিসি ভেরিফাই’য়ে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের নবগ্রহ মন্দির হিসেবে চিহ্নিত ভবনটি সহিংসতাচলাকালে অক্ষত ছিল। প্রকৃতপক্ষে আগুন জ্বলছিল এর কাছাকাছি থাকা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে। ঘটনার পর বিবিসির সংগ্রহ করা বিভিন্ন ছবিতে আওয়ামী লীগের সদস্যদের মুখচ্ছবিসংবলিত পোস্টারের ধ্বংসাবশেষ দেখা গেছে।

ওই মন্দিরের কর্মী স্বপন দাস বিবিসি ভেরিফাইকে বলেন, ‘৫ আগস্ট দুপুরের পরে মন্দিরের পেছনে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা হয়। হামলাকারীরা কার্যালয়ের ভেতর থেকে আসবাবপত্র বাইরে এনে তাতে আগুন ধরিয়ে দেন।’

তিনি জানান, ওই ঘটনার দিন মন্দিরে হামলা না হলেও উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করায় সেটি বন্ধ রাখা হয়েছে। স্থানীয় লোকজন দিন–রাত পালাক্রমে মন্দির পাহারা দিচ্ছেন।

এটি একই রকমের অনেক ঘটনার একটি উদাহরণ মাত্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নজর রাখা প্রতিষ্ঠান ব্র্যান্ডওয়াচের তথ্য অনুযায়ী, হিন্দুদের বাড়িঘর–মন্দিরে মুসলিমদের হামলা—৪ আগস্টের পর থেকে এমন হ্যাশট্যাগের অধীন প্রচারণায় লাখ লাখ মানুষ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব অ্যাকাউন্ট থেকে এ ধরনের প্রচারণা চালানো হয়েছে, সেসবের অধিকাংশই ভারতীয়।

ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোর একটিতে দাবি করা হয়, একজন বাংলাদেশি হিন্দু ক্রিকেটারের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিবিসি ভেরিফাইয়ে দেখা গেছে, সেটি মূলত আওয়ামী লীগের একজন মুসলিম সংসদ সদস্যের বাড়ি।

আবার ওই এলাকার একটি স্কুল জ্বালিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। বিবিসি সেটি পরিদর্শনে গিয়ে দেখতে পায়, এ হামলার পেছনে ধর্মীয় কারণের পরিবর্তে রাজনৈতিক কারণ ছিল। হামলা–আগুনসংক্রান্ত এসব পোস্টের সবই কয়েকটি অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা হয়েছে। এসব অ্যাকাউন্টের অনেকগুলো হিন্দু জাতীয়তাবাদী মূল্যবোধকে সমর্থন করে।

বাংলাদেশে ঘৃণাসূচক বক্তব্য ও মিথ্যা তথ্যের প্রচার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সাঈদ আল–জামান বলেন, শেখ হাসিনার আকস্মিক বিদায়ে বিষয়গুলো আরেকবার সামনে এসেছে। কেননা সরকার ও কার্যকর আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার অনুপস্থিতিতে হিন্দুরা নিজেদের অনিরাপদ মনে করেছেন।

ঘটনার মিথ্যা বর্ণনা এ পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওই সব ইনফ্লুয়েন্সার ভয়–আতঙ্ক ছড়িয়ে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলছেন।’

হিন্দুদের মুসলিমদের নিশানা হওয়ার ভুয়া দাবিসংবলিত পোস্টগুলোর কিছু এসেছে বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়িয়ে বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে থাকা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট থেকে। এমন অ্যাকাউন্টধারীদের একজন টমি রবিনসন। যুক্তরাজ্যে মুসলিম ও অভিবাসীদের লক্ষ্য করে পরিচালিত দাঙ্গায় উসকানিমূলক পোস্ট দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে সমালোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশের ঘটনাগুলো নিয়ে যাচাই না করা ভিডিও শেয়ার করছেন তিনিও। ভিডিওতে তিনি বলেছেন, ‘সেখানে (বাংলাদেশে) হিন্দুদের বিরুদ্ধে গণহত্যা’ চলছে।’

টমির শেয়ার করা ভিডিওগুলোর একটি নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে বিবিসি। ভিডিওতে দেখা যায়, একজন নারী তার বাড়িতে হামলার ঘটনায় স্বামীর জীবন বাঁচাতে আকুতি জানাচ্ছেন। তার বাড়িতে ‘মুসলিমরা’ হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করা হয় পোস্টটিতে। এ ঘটনার এক দিন পর ৬ আগস্ট প্রকৃত ভিডিও শেয়ার হয়।

ঘটনাটির অনুসন্ধান করেছিল বিবিসি। ওই নারীকে তার বাড়ি রক্ষায় সহায়তা করা স্থানীয় শিক্ষার্থীদের একটি দল বিবিসিকে বলেছে, বাড়িটি নিয়ে যে বিবাদ ছিল সেটি সম্পূর্ণ আলাদা একটি বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তারা বিবিসিকে ওই বাড়ির ছবি ও ভিডিও সরবরাহ করে। তাতেও দেখা যায়, বাড়িটির ভেতরে থাকা মন্দির অক্ষত রয়েছে।

একজন শিক্ষার্থী বিবিসিকে বলেন, ‘বাড়িটি নিয়ে জমির মালিকানা ঘিরে বিবাদ ছিল। বহু আগেই এ নিয়ে একটি মামলা হয়েছে।’ জমির মালিকানা নিয়ে দায়ের হওয়া মামলাটি স্থানীয় আদালতে প্রায় ছয় মাস বিচারাধীন ছিল।

স্থানীয় অন্যদের সঙ্গেও কথা বলেছে বিবিসি। তারা জানিয়েছেন, বাড়িটিতে ধর্মীয় কারণে হামলা হয়নি। আর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে হিন্দু ও মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন। তারা জানিয়েছেন, এ এলাকার অন্য কোনো হিন্দু পরিবার ও মন্দিরে হামলা হয়নি।

এ ব্যাপারে বিবিসি জানতে চাইলে টমি রবিনসন কোনো সাড়া দেননি।

Views: 4

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..