1. nasiralam4998@gmail.com : admi2017 :
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৩ অপরাহ্ন

গুলিবিদ্ধ মবিনের দুই চোখ হারানোর শঙ্কা, অর্থাভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৪
  • ৩৫ বার

বিছানায় বসে নীরব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল ১৭ বছর বয়সী মবিন। বাইরে যেতে কিংবা হাঁটাচলায় নিতে হচ্ছে পরিবারের সাহায্য। কিন্তু, এক মাস আগেও সুন্দর একটি ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনেছিল এই কিশোর। কোটা সংস্কার আন্দোলনে দুই চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসার অভাবে হারাতে বসেছে চোখের আলো। এতে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েছে দরিদ্র পরিবারটির। আবার নতুন করে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়ে আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছেন সবার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার বড় শিধলকুড়া এলাকার মৃত মোফাজ্জল হোসেন ও নাজমা বেগম দম্পতির ছোট ছেলে মবিন। বড় ছেলে জুলহাস বাক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। রাখতে হয় শিকলবন্দি। আর মেজো ছেলে নাজমুল হুদা সামান্য বেতনের চাকরি করেন। বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের সচ্ছলতা ফেরাতে কয়েক মাস আগে ঢাকার উত্তরা রাজলক্ষ্মী এলাকায় কম্পিউটারের দোকানে চাকরি নেয় মবিন।

দেশজুড়ে যখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন উত্তাপ ছড়াচ্ছে আর তখনই পরিবারের কথা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিছিলে অংশ নিয়েছিল মবিন। ১৮ জুলাই বেলা ১১টার দিকে মিছিলটি উত্তরা থানার দিকে এগোলে হঠাৎ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বৃষ্টির মতো গুলি ছোড়ে। সে সময় অন্তত ২০০টির বেশি ছররা গুলি এসে বিদ্ধ হয় মবিনের মুখমণ্ডল জুড়ে। এরপর চোখের সামনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। রক্তাক্ত অবস্থায় সড়কে লুটিয়ে পড়লে তাকে উদ্ধার করে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গত এক মাসে দরিদ্র পরিবারটি শুধু চিকিৎসা বাবদ ব্যয় হয়েছে অন্তত ২ লাখ টাকা। তবে বর্তমানে অর্থের অভাবে থেমে রয়েছে তার চিকিৎসা।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মবিন বলেন, আমি দোকান বন্ধ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিই। উত্তরা থানার কাছে আসতেই হঠাৎ করে গুলি ছুঁড়ে। কিছু বোঝার আগেই দেখি চোখ ও মাথা দিয়ে রক্ত পড়ছে। আমি সেখানেই পড়ে যাই। পরে শিক্ষার্থীরা আমার গেঞ্জি খুলে মাথায় বেঁধে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এখন আমি দুচোখে দেখতে পাই না। তবে ডান চোখে টর্চের আলো অনুভব করতে পারি। জানি না আবার আগের মতো দেখতে পাবো কি না। তবে আমি দেখতে চাই।

মবিনের মা নাজমা বেগম বলেন, দেশ আজ এক মাস ধরে স্বাধীন হলো। কিন্তু আমার ছেলে চোখে দেখতে পাচ্ছে না। আমাদের সহায় সম্বল যা ছিল তা বিক্রি করে চিকিৎসা চালিয়েছি। এখন আর সম্ভব না তাই আপাতত চিকিৎসা বন্ধ। বাড়িটুকু বিক্রি করে হলেও ছেলেকে তো চিকিৎসা করাতে হবে। যদি সমাজের বিত্তশালী বা সরকারিভাবে আর্থিক সাহায্য পাই তাহলে আমার ছেলের চিকিৎসা করানো যাবে।

মবিনের মেজো ভাই নাজমুল হুদা বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের ডাকে আমার ভাই দেশের জন্য আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। এখন সরকারের উচিত আমাদের পাশে দাঁড়ানো। আমাদের এখন চিকিৎসা করানোর কোনো টাকা নেই। আমার ভাইয়ের সুচিকিৎসার দাবি জানাই।

স্থানীয় বাসিন্দা অনিক হোসেন বলেন, মবিন কিছু পাওয়ার জন্য নয়, দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করতে আন্দোলনে গিয়েছিল। ও দেশকে ঠিকই স্বৈরাচারমুক্ত করেছে কিন্তু ওর চোখ দুটো আজ নষ্ট হওয়ার পথে। এখন ওর চিকিৎসা দরকার। চিকিৎসা হলে হয়তো ও আবার আগের মতো দেখতে পাবে। সবার কাছে আমাদের অনুরোধ এই পরিবারটির দিকে সরকার যেন নজর দেয়।

Views: 4

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..