মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, সাংবাদিক ও পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর করে নির্বাচনি কাজে হস্তক্ষেপের অভিযোগে হোসেন্দি ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠুকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) দুপুরে বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুন্সিগঞ্জ স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মো. জুবায়ের।
গত বুধবার স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি শাখা-১ এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মো. জুবায়ের বলেন, নির্বাচনি কাজে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের আদেশে মনিরুল হককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ব্যপারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
গত ৮ মে প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন চলাকালে হোসেন্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক, তার ভাই গাজীপুর আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইকবাল হক ও ভাতিজা তানভীর হক ওই ইউনিয়নের ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করতে কেন্দ্রের বাইরে জড়ো হচ্ছিলেন। ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য সোহেল রানা সবাইকে সরে যেতে বলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে চেয়ারম্যান মনিরুল হকের নির্দেশে সোহেলকে মারধর শুরু করেন তার ভাতিজা তানভীর এবং তাদের লোকজন।
ওই ঘটনার সময় পাশ থেকে ভিডিও করছিলেন সাংবাদিক গোলজার হোসেন। পরে তারা গোলজারের ওপর হামলা করেন। তার মুঠোফোন, পকেটে থাকা টাকা, আইডি ও পর্যবেক্ষক কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে মারধর করতে থাকেন। অন্য সাংবাদিকেরা এসে তাকে উদ্ধার করেন। পরে সাংবাদিকেরা ভোটকেন্দ্রের ভেতর আশ্রয় নেন। সেখানে তাদের মারধর করতে তেড়ে আসেন মনিরুল হক ও তার ভাই ইকবাল হকসহ তাদের লোকজন। সাংবাদিকদের হত্যা ও হাত-পা কেটে ফেলার হুমকি দেন তারা।
একই দিন হোসেন্দি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারেন মনিরুল হকের লোকজন। পুলিশ বাঁধা দিলে ককটেল ফাটিয়ে, তাদের উপর অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। পুলিশের দুই সদস্যকে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর করে তারা।
এ ঘটনার পর দিন বৃহস্পতিবার পুলিশ এবং সাংবাদিক গোলজার হোসেন আলাদাভাবে বাদি হয়ে চেয়ারম্যান মনিরুল হককে প্রধান আসামি করে দু’টি মামলা করেন। এ দু’টি মামলায় ২১৮ জনকে আসামি করা হয়।
শনিবার (১১ মে) রাত ৯টার দিকে ঢাকার শাহজাহানপুরের একটি বাড়ি থেকে মনিরুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন রোববার দুপুরে তাকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মহিদুল ইসলাম। পরে শুনানি শেষে এক দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন গজারিয়ার আমলী আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রহিমা আক্তার।
এদিকে পুলিশ ও সাংবাদিকের দুই মামলায় শুধু ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও অন্য আসামিদের এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি।
Views: 2
Leave a Reply