চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রহনপুর আঞ্চলিক সড়কে পথচারীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে মরিচাডাঙ্গায় একটি পুলিশ বক্স নির্মাণকাজ জেলা পরিষদের অর্থায়নে শুরু হলেও গত ৬ বছরেও শেষ হয়নি। ঢালাই করা একটি ঘর নির্মাণ করা হলেও সেখানে এখন নিয়মিতই বসে মাদকসেবিদের আড্ডা।
সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের মরিচাডাঙ্গায় পুলিশ বক্সটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত পুলিশদের থাকার সুবিধার্থে এ ঘরটি নির্মাণের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় জেলা পরিষদ। এই উন্নয়ন প্রকল্পের দাতা হলেন জেলা পরিষদের সাবেক সংরক্ষিত সদস্য ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হালিমা খাতুন।
পুলিশ বক্সটি পরির্দশনে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ইট দিয়ে ঘেরা একটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ঘরটিতে ছাদ থাকলেও পলেস্তারা করা হয়নি এখনও। নেই দরজা কিংবা জানালা। দীর্ঘদিন ঘরটি পরিত্যক্ত থাকায়, দেয়ালগুলোয় মাকড়সা জাল বুনেছে। ইটের ফাঁকে পরজীবী উদ্ভিদ বেরিয়ে দুইপার্শ্বের গোটা দেয়াল ছেয়ে গেছে। পড়ে রয়েছে সিগারেটের ব্যবহৃত প্যাকেটসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্যের পরিত্যক্ত অংশ।
পথচারীরা বলছেন, এই সড়কটিতে ডাকাতের উপদ্রব থাকায় যাতায়াতকারীদের কথা ভেবে পুলিশ বক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেয় জেলা পরিষদ। দুই লাখ টাকা গচ্চা গেলো ঠিকই, কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
আমিনুল ইসলাম নামে আরেক পথচারী জানান, এই সড়কটির অনেক এলাকাজুড়ে মানুষের বাড়ি ঘর নাই। যারকারণে রাতের বেলায় সড়কটি পথচারীদের জন্য খুব একটা নিরাপদ নয়। ফলে পুলিশ বক্সটির নির্মাণ কাজ শেষ করে, এখানে পুলিশি পাহারা জোরদার করা হোক। তাহলে পথচারীরা নির্বিঘ্নে পথ চলতে পারবে।
পথচারী শফিকুল ইসলাম বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রহনপুর সড়কে একটি পুলিশ বক্স থাকা খুবই প্রয়োজন। প্রায়ই দিনের বেলায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। সড়কটিতে পুলিশ বক্স থাকলে দুর্বৃত্তরা এধরনের কাজ করতে পারতো না।
পরিত্যক্ত পুলিশ বক্সের কথা জানেন না উল্লেখ করে গোমস্তাপুর থানার ওসি চৌধুরী জোবায়ের আহাম্মদ জানান, ওই সড়কটিতে নিয়মিত পুলিশ গাড়ি নিয়ে টহল দেয়। এছাড়া অপ্রীতিকর কোন খবর পেলেই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
প্রকল্পদাতা জেলা পরিষদের সাবেক সংরক্ষিত আসনের সদস্য হালিমা খাতুন বলেন, সড়কটিতে দিনদুপুরে ডাকাতি-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটে। পথচারীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে জেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দ নিয়ে একটি রাস্তার পাশে একটি পুলিশ বক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গোমস্তাপুর থানা পুলিশের নজরদারিতে ওই পুলিশ বক্সটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। পরে টাকার অভাবে কাজটি শেষ করা সম্ভব হয়নি। যদিও আরও দুই লাখ টাকা চেয়ে জেলা পরিষদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পুলিশ বক্সটির নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য বলেছিলাম। পরে তারাও আর উদ্যোগ নেয়নি, কাজও শেষ হয়নি।
তিনি বলেন, পুলিশ বক্সটি নির্মাণকাজ শেষ করা খুবই প্রয়োজন। সম্প্রতি এক নারীর কাছ থেকে দুপুরে টাকা নিয়ে গেছে ছিনতাইকারীরা। পুলিশ সেখানে থাকলে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা এই সুযোগ পেতো না।
রাস্তার পাশের এই পুলিশ বক্সটির নির্মাণকাজ শেষ করে জায়গাটিতে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করতে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি কামনা করেন জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য হালিমা।
সচেতন মহলের অভিযোগ, লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে জেলা পরিষদ অনেক উন্নয়ন কাজ শুরু করেন। কিছু কিছু নির্মাণ কাজ টাকার সংকটের কারণে সম্পন্ন হয় না। পরে ওই কাজের বিপরীতে যে টাকা খরচ হয় তা মানুষের জন্য উপকারে আসেনা। এসব ক্ষেত্রে নতুন বরাদ্দ দিয়ে অসম্পন্ন কাজটি সম্পন্ন করতে হবে নইলে রাষ্ট্রের মোটা অংকের টাকা গচ্চা যাবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব মনিরুজ্জামান বলেন, সরকারি দুই লাখ টাকা খরচ করে যেহেতু রাস্তার পাশে পুলিশ বক্স নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। গত ৬ বছর ধরে এই কাজটি সম্পন্ন হয়নি। সংশ্লিষ্টদের উচিত আবারও নতুন করে বরাদ্দ দিয়ে যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে ঘরটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল, তা সম্পন্ন করা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আফাজ উদ্দিন পুলিশ বক্সটি নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার সময় এখানে কর্মরত ছিলেন না উল্লেখ করে বলেন, আমরা সেখানে লোক পাঠাবো। যদি নতুন বরাদ্দ দিয়ে পুলিশ বক্সের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা যায়, তাহলে সেটাই করবো।
Views: 12
Leave a Reply