বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী চুয়াডাঙ্গায় সংসদীয় আসন দুটি। আসন্ন জাতীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই উত্তাপ বাড়ছে। সর্বত্র আলোচনায় কে হচ্ছেন কোন দলের প্রার্থী। সরকারি দলের একাধিক প্রার্থী মাঠে থাকলেও হরতাল-অবরোধের শুরু থেকে বিএনপিসহ বিরোধী দলের কোনো প্রার্থী মাঠে নেই। আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠ গরম করে রেখেছেন। দেশ স্বাধীনের পর থেকে আসন দুটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে লড়াই হয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না- এমনটাই আশা ভোটারদের।
চুয়াডাঙ্গা-১ ॥ সদর উপজেলার তিতুদহ, বেগমপুর, নবগঠিত গড়াইটুপি ও নেহালপুর বাদে ছয়টি এবং আলমডাঙ্গা উপজেলার ১৫টি অর্থাৎ ২১টি ইউনিয়ন, দুটি পৌরসভা ও দুটি থানা নিয়ে গঠিত। বিগত ১১টি নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগ চারবার, বিএনপি পাঁচবার, স্বতন্ত্র একবার এবং জাসদ (রব) সমর্থিত প্রার্থী একবার বিজয়ী হয়েছেন। এ হিসেবে আসনটি এক সময় বিএনপির দুর্গ বলে পরিচিতি পেলেও বর্তমানে আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে
তিন মেয়াদে নির্বাচিত বর্তমান সংসদ সদস্য ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক হুইপ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, সদর উপজেলার তিনবারের চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আশাদুল হক বিশ্বাস, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটির সদস্য বিশিষ্ট শিল্পপতি দিলীপ কুমার আগরওয়ালা, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার, মাইওয়ান মিনিস্টার গ্রুপের চেয়ারম্যান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য বিশিষ্ট শিল্পপতি এম এ রাজ্জাক খান রাজ ও জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি আফরোজা পারভীন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কর্মীসভা, পথসভা, জনসভা ও গণসংযোগসহ কেন্দ্র ঘোষিত সকল কর্মকা- নিয়ে মাঠে সরব রয়েছেন। অপরদিকে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শিরিন নাইম পুনম শহরে পোস্টার লাগিয়ে ভোটার ও কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।
এদিকে সম্ভব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন যুবলীগের সভাপতিম-লীর সাবেক সদস্য, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ শামসুল আবেদীন খোকন এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ডা. মাহবুব হোসেন মেহেদী।
সাম্প্রতিক সময়ে হরতাল-অবরোধ শুরুর পর থেকে বিএনপির কোনো প্রার্থী মাঠে না থাকলেও তারা ভেতরে ভেতরে আসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া। এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন কারাবন্দি কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক এমপি শামসুজ্জামান দুদু, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শরীফুজ্জামান শরীফ ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য লে. কর্নেল (অব) সৈয়দ কামরুজ্জামান।
এছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের কেন্দ্রীয় টিম সদস্য মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক মালিক, জাতীয় পার্টির (এরশাদ) জেলা আহ্বায়ক সোহরাব হোসেন, জাসদ (ইনু) এম. সবেদ আলী, ইসলামী আন্দোলনের জেলা সহ-সভাপতি মাওলানা জহুরুল ইসলাম, ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির (এনপিপি) মহাসচিব ইদ্রিস চৌধুরী ও জাকের পার্টির জেলা সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান।
চুয়াডাঙ্গা-২ ॥ সদর উপজেলার চারটি, দামুড়হুদা উপজেলার আটটি এবং জীবননগর উপজেলার আটটি অর্থাৎ ২০টি ইউনিয়ন, দুটি পৌরসভা ও তিনটি থানা নিয়ে গঠিত। এ আসনের বেশিরভাগ ভোটার কৃষি ও কৃষি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি ও রেলবন্দরসহ অন্য শ্রমিকের সংখ্যাও কম নয়।
বিগত ১১টি সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগ চারবার, বিএনপি চারবার এবং জাসদ (শাহজাহান সিরাজ), জাপা ও জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত প্রার্থী একবার করে বিজয়ী হয়েছেন। এ হিসেবে আসনটিতে এক সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমানে সমান বলে পরিচিতি পেলেও বর্তমানে এ আসনটিও আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ে আওয়ামী লীগরে জনসমর্থন বেড়েছে। তবে সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে আছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রতিযোগিতা।
অপরদিকে বিএনপিতে দলীয় কোন্দল, মনোনয়নের প্রতিযোগিতা কোনোটিই না থাকায় একমাত্র মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন ফুরফুরে মেজাজে। জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী দিলে নির্বাচনে লড়াই হবে ত্রিমুখী। নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় নানা ধরনের রাজনৈতিক, সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকা- করে ভোটার ও কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন।
এ আসন থেকে আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী টানা তিন মেয়াদে নির্বাচিত বর্তমান সংসদ সদস্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিরি সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি হাজী আলী আজগার টগর ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য হাশেম রেজা।
এছাড়াও মনোনয়ন প্র্রত্যাশী হিসেবে একযোগে মাঠে রয়েছেন দামুড়হুদা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদ, দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান মনজু, সাবেক ছাত্রনেতা ও ঢাকাস্থ চুয়াডাঙ্গা জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মির্জা শাহরিয়ার মাহমুদ লল্টু, ঢাকাস্থ চুয়াডাঙ্গা জেলা সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান, জীবননগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উপাধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু মো. আব্দুল লতিফ অমল, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য মো. শাহরিয়ার কবির ও দর্শনা সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি এয়ার কমোডর (অব) মো. আবু বক্কর।
অপরদিকে বিএনপির একমাত্র মনোনয়ন প্রত্যাশী রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিশিষ্ট শিল্পপতি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক, কেন্দ্রীয় বিএনপির উপ-কোষাধ্যক্ষ মাহমুদ হাসান খান বাবু। এছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর চুয়াডাঙ্গা জেলা আমির কারাবন্দি রুহুল আমিন, জাসদের জেলা সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম বাবু, জাপার (এরশাদ) জেলা সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের জেলা সভাপতি হাসানুজ্জামান সজিব, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি জাতীয়তাবাদী সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য নবী চৌধুরী ও জাকের পার্টির কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল লতিফ খান যুবরাজ।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় কর্মী সমাবেশ সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুটি আসনে যাকেই মনোনয়ন দেবেন, তার হয়ে জেলা আওয়ামী লীগ মাঠে কাজ করবে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব শরিফুজ্জামান শরীফ বলেন, বিএনপি একদফা দাবিতে আন্দোলনে আছে। এই সরকারের অধীনে নির্বাচন না করার বিষয়ে দল অনড়। ইতোমধ্যে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে জেলা নির্বাচন অফিস থেকে ট্রেনিংয়ের বিষয়ে বলা হয়েছিল। আমরা অংশ নেইনি। ওয়ার্ড থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ৩৬৯টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমাদের মধ্যে দৃশ্যমান কোনো কোন্দল নেই। তৃণমূল থেকে সাড়া জাগিয়েছি। যে কোনো আন্দোলনের জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রস্তুত।
এলাকার ভোটাররা বলেছেন, সততা, দক্ষতা ও জনগণকে মূল্যায়নের সক্ষমতা বিবেচনায় এনে সৎ ও আদর্শবান রাজনৈতিক নেতাকে নির্বাচনে প্রার্থী করা হলে জনগণের প্রকৃত ক্ষমতায়ন হবে। যার দরজা শুধু দলীয় নেতাকর্মীদের জন্য নয়, বরং সাধারণ মানুষের জন্যও খোলা থাকবে, যিনি রাজনৈতিক সহাবস্থানে বিশ্বাসী হবেন। সবার কথা ভাববেন। একইসঙ্গে সৎ, যোগ্য, দেশপ্রেমিক ও নিবেদিতপ্রাণ মানুষ হবেন এমন প্রার্থীকেই আমরা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করব।
Views: 5
Leave a Reply