1. nasiralam4998@gmail.com : admi2017 :
শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৪ অপরাহ্ন

চলো মা, বাবাকে আকাশ থেকে নিয়ে আসি

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৩
  • ৬৬ বার

বাবাকে হারিয়েছে ৩ বছর। ৩ বছরের সাফয়ান করিমের বয়স এখন ৬। ক্রমেই বাবাকে কাছে পাওয়ার ইচ্ছেটা আরও জাগ্রত হচ্ছে। যখন তার বন্ধুদের দেখে বাবার সাথে স্কুলে যেতে, ঘুরতে তখন বাবাকে কাছে পাওয়ার আকাঙ্খাটা আরও বেড়ে যায়। মায়ের কাছে এসে বলে, ‘চলো মা, বাবাকে আকাশ থেকে রকেট দিয়ে নিয়ে আসি।’

রাজধানীর শ্যামলিতে ঘটনাটি ঘটে ২০২০ সালে। মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিম।

জানা যায়, আনিসুল করিম ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর দুপুর পৌনে ১২ টার দিকে তাকে ‘মাইন্ড এইড হাসপাতাল’-এ নেওয়া হয়। ভর্তির কিছুক্ষণ পর ওই হাসপাতালের কর্মচারীদের ধস্তাধস্তি ও মারধরে আনিসুল করিমের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আনিসুল করিমের বাবা ফাইজুদ্দীন আহম্মেদ বাদী হয়ে আদাবর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

দুই বছর পর (২০২২) ৮ মার্চ এ মামলায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার আবদুল্লাহ আল মামুনসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা আদাবর থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. ফারুক মোল্লা। তবে এ মামলায় এজাহারে ডা. নুসরাত নামে একজনকে আসামি করা হয়নি। কিন্তু মামলা দায়েরের পর উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন তিনি। তবে চার্জশিটে তার নাম আসেনি। এএসপি আনিসের পরিবারের ধারণা, নিশ্চয়ই ডা. নুসরাত ঘটনার সাথে জড়িত। না হলে কেনো তিনি আগেই জামিন নিবেন। এজন্য মামলাটি পুনরায় তদন্তের আবেদন করেন বাবা ফাইজুদ্দীন আহম্মেদ। পরে আদালত তা মঞ্জুর করে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

৩০ নভেম্বর (২০২২) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) এ কে এম নাসির উল্যাহ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার আবদুল্লাহ আল মামুনসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এরমধ্যে মাইন্ড এইড হাসপাতালের পরিচালক মুহাম্মদ নিয়াজ মোর্শেদ মৃত্যুবরণ করায় এবং আসামি ডা. নুশরাত ফারজানার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় মামলার দায় থেকে তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

এরপর মামলাটি বিচারের জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। এ বছর ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শেখ ছামিদুল ইসলামের আদালত আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে ১৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের আদেশ দেন। ৯ নভেম্বর (আজ) সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন আদালত। আজ মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য রয়েছে।মামলা সম্পর্কে আনিসুল করিমের স্ত্রী শারমিন আক্তার বলেন, ‘তিন বছর হয়ে গেলো বিচার পেলাম না। প্রত্যাশা ছিলো মামলাটার বিচার দ্রুত শেষ হবে। সেই প্রত্যাশা এখন আর নেই। আইনের লোক হয়েও তার মামলার বিচারে এতো ধীরগতি। তিন বছর আমি তাকে ছাড়া কীভাবে চলছি বলে বোঝানো যাবে না। তবুও চলতে হচ্ছে। শো অফ করার টাইমও নাই। ছেলেকে নিয়ে স্ট্যাগল করছি। লাইফে স্ট্যাগল করতে গিয়ে শোকটা আর নেই। আনিস চলে যাওয়ার পর ছেলেকে নিয়ে মুভ করতে আর চাকরি নিয়ে ব্যস্ত সময় চলে যাচ্ছে।’  কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘বিচারটা তো হবে না, হতাশ। তবুও আশায়, ডিমান্ড থাকবে সুবিচারের।’ছেলের সাফয়ান করিমের কথা উল্লেখ করে শারমিন আক্তার বলেন, ‘সে সবকিছুতে বাবাকে মিস করে। উঠতে, বসতেই বাবার কথা বলে। প্রত্যেকটা বিষয়ে তার বাবা থাকে। ওর বন্ধুদের দেখে বাবার সাথে। সেও বাবার সাথে স্কুলে যেতে চায়। বলে, বাবা থাকলে বাবার সাথে স্কুলে যেতে পারতো। আমাকে বলে, চলো মা বাবাকে রকেট দিয়ে আকাশ থেকে নিয়ে আসি। তখন ছেলেকে কি দিয়ে বুঝাবো। যাই হোক আনিস হত্যার সুষ্ঠু এবং দ্রুত বিচারের প্রত্যাশা করছি।’

আনিসের ছেলে সাফয়ানের বিষয়ে বলেন, ‘ফোনে কথা হয়। মাঝে মধ্যে আসে। ও তো বাবার জন্য পাগল। পুলিশের গাড়ি দেখলেই বলে বাবা আসছে।’

আনিসের বড় ভাই রেজাউল করিম বলেন, ‘ভাইকে হারানোর কথা অল্প কথায় বুঝানো যায়। চার ভাই-বোনের মধ্যে আনিস ছিলো সবার ছোট। সবার আদরের। সেই ভাইটা তিন বছর নেই। ভাই হারানোর ব্যথা বলে বুঝানো যায় না। ওকে ছাড়া সবকিছু শূন্য শূন্য লাগে। আমার বাচ্চারা আমাকে বাবা বলে ডাকে। অথচ আনিসের ছোট বাচ্চাটা তার বাবাকে বাবা বলে ডাকতে পারে না। বাবা থাকলে তার সাথে ঘুরতে পারতো।’

তিনি বলেন, ‘হায়াত, মউত আল্লাহর থাকে। তারা আমার ভাইকে কিভাবে হত্যা করেছে ভিডিও ফুটেজ আছে। তারপরও তিন বছরেও মামলাটার বিচার হলো না। পুলিশ বাহিনীর লোকের হত্যা মামলার বিচারে এতোদিন লাগে প্রশ্ন থেকে যায়। আমরা হতাশ। এটা নিয়ে অনেক নাটক হলো। যাই হোক- মামলাটার দ্রুত বিচার হোক, হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হোক।’

সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন হাওলাদার বলেন, ‘অনেক তদবির, চাপ ছিলো। তবে মামলায় ১৫ জনের বিরুদ্ধেই চার্জগঠন হয়ে গেছে। বাদীসহ কয়েকজনকে সাক্ষ্য দিতে সমন পাঠানো হয়েছে। সাক্ষীরা নিয়মিত আসলে বিচার দ্রুত শেষ করতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। ভূক্তভোগী পরিবার যেন ন্যায় বিচার পায় তা নিশ্চিত করবো।’

অপর আসামিরা হলেন-মাইন্ড এইড হাসপাতালের পরিচালক আরিফ মাহামুদ, ফার্মাসিস্ট তানভীর হাসান, কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন, সাজ্জাদ আমিন ও ফাতেমা খাতুন, হাসপাতালের সমন্বয়ক রেদোয়ান সাব্বির, হাসপাতালের কর্মচারী মাসুদ খান, জোবায়ের হোসেন, তানিফ মোল্লা, সজীব চৌধুরী, অসীম কুমার পাল, লিটন আহম্মেদ, সাইফুল ইসলাম ও আবদুল্লাহ আল-আমিন। আসামিদের মধ্যে অসীম কুমার পাল কারাগারে আছেন। শাখাওয়াত হোসেন পলাতক রয়েছেন। অপর ১৩ আসামি জামিনে আছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ৩৩ ব্যাচের ছাত্র আনিসুল করিম ৩১তম বিসিএসে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। এক সন্তানের জনক আনিসুলের বাড়ি গাজীপুরে। সর্বশেষ তিনি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন।

Views: 1

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..