ছয় বলে ভারতের প্রয়োজন ৩ রান। বাংলাদেশের ১ উইকেট। বোলিংয়ে দুরন্ত মারুফা আক্তার। প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে পরে দুই রান নেন জেমিমা রদ্রিগেজ-মেঘনা সিং। ম্যাচ টাই হয়ে যায়। লাল সবুজের মেয়েদের মাঝে তখনো বিরাজ করছিল হার না মানা মানসিকতা। মারুফার আউট সাইড অফের বল স্ট্রাইকে থাকা মেঘনা খেলতে গিয়ে খোঁচা দিয়ে বসেন। ভুল করেননি নিগার সুলতানা জ্যোতি।বল তার গ্লাভসে।
জোরালো আবেদনে আম্পায়ার শূন্যে আঙুল তুলতেই বাঁধন হারা উল্লাসে মেতে ওঠে বাংলাদেশের মেয়েরা। ড্রেসিংরুম-ডাগআউট থেকে দৌড়ে এসে চলতে থাকে কোচিং স্টাফসহ বাকিদের উল্লাস। তখন ভারত শিবির যেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। তীরে এসে বাংলাদেশের তরি ডুবতে দেননি অদম্য মারুফা।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচটির সমাপ্তি ঘটে টাই-তে। টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশ ফারজানা হক পিঙ্কির ইতিহাস গড়া সেঞ্চুরিতে ভর করে ৪ উইকেটে ২২৫ রান করে। রান তাড়া করতে নেমে ভারত ১০ উইকেটে ২২৫ রান করে।
বৃষ্টির কারণে মাঝে ৪০ মিনিট খেলা হয়নি। সময়ের অভাবে ম্যাচ অফিসিয়ালরা সুপার ওভার দেননি। তিন ম্যাচের সিরিজ শেষ পর্যন্ত ১-১ ব্যবধানে ড্র হয়। সিরিজ জেতার ইতিহাস গড়তে না পারলেও বাংলাদেশ ড্র করে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখায়।
রান তাড়া করতে নেমে শুরু থেকে সাবলীল খেলতে থাকে ভারত। এক প্রান্তে হারলিন দেওল খেলছিলেন দুর্দান্ত। অন্য প্রান্তে লম্বা বিরতিতে পড়ছিল উইকেট। ম্যাচের মোড় ঘুরে যায় ৪২তম ওভারে। থিতু হওয়া হারলিন ও নতুন ব্যাটার দিপ্তী শর্মাকে রানআউট করে সম্ভাবনা জাগায় বাংলাদেশ। সেই সম্ভাবনা শেষ পর্যন্ত রূপান্তর হয় ড্র-তে।
তখনো ভারতের প্রয়োজন ছিল ৪৮ বলে ৩৪ রান। হাতে ছিল ৪ উইকেট। বল-রানের পার্থক্য কমতে থাকে, এক প্রান্তে উইকেট পড়তে থাকে আরেক প্রান্তে ক্রিজে থিতু হওয়া জেমিমা রদ্রিগেজ ছিলেন হুমকি হয়ে। জেমিমা শেষ পর্যন্ত ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন। মেঘনা আউট হয়ে যাওয়ার তার চেয়ে দেখা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। তবে ৪৯তম ওভারে এই মেঘনার চারের মারেই ম্যাচটি টাই করতে পারে ভারত।
ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৭ রান করেন হারলিন। ৫৯ রান আসে স্মৃতি মান্ধানার ব্যাট থেকে। স্মৃতি এতদূর যেতে পারতেন না যদি না শুরুতে জ্যোতি ক্যাচ মিস না করতেন। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন নাহিদা আক্তার। ২ উইকেট নেন মারুফা।
এর আগে শারমিন সুলতানাকে নিয়ে বাংলাদেশের শুরুটা দারুণ এনে দেন ফারজানা। ফারজানার ব্যাট থেকে আসে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরি। দুজন ওপেনিং জুটি থেকে যোগ করেন ৯৩ রান। শারমিন ৭৮ বলে ৫২ রানে আউট হলে ভাঙে এই জুটি।
শারমিন আউট হলে এবার অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতিকে নিয়ে এগোতে থাকেন ফারজানা। দ্বিতীয় উইকেটের জুটিতে দুজনে যোগ করেন ৭১ রান। জ্যোতি ২৪ রানে আউট হলে ভাঙে এই জুটি। জ্যোতির পর রিতু মণি ক্রিজে এসে ফেরেন মাত্র ২ রানে। এরপর সোবহানাকে নিয়ে আবার ফিফটির জুটি গড়েন ফারজানা। মাত্র ৪৯ বলে ৫৬ রান যোগ করেন তারা দুজন। শেষ বলে ১০৭ রানে সাজঘরে ফেরেন ফারজানা। না হলে জুটি অবিচ্ছেদ্য থাকতে পারতো।
ফারজানা তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন ১৫৬ বলে। তার ইনিংসটি সাজানো ছিল ৭টি চারে। এর আগে ফিফটি করেন ৯৭ বলে। ফিফটি থেকে সেঞ্চুরিতে যেতে ফারজানা খরচ করেন মাত্র ৫৯ বল। শুধু ফারজানার সেঞ্চুরিই নয়, ভারতের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর ছিল। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর দারুণ বোলিংয়ে বাংলাদেশ ম্যাচটা জিততে দেয়নি ভারতকে। অসাধারণ রানআউট করলেও এদিন বাংলাদেশের মেয়েদের ফসকে পড়েছে কয়েকটি ক্যাচ। নাহয় গল্পটা আরও সুন্দর হতে পারতো।
Views: 1
Leave a Reply