গণঅর্থায়নে খন্দকার সুমন নির্মাণ করেছেন ‘সাঁতাও’। ছবিটি ‘২১তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’-এর বাংলাদেশ প্যানোরমা বিভাগে প্রিমিয়ার হয়েছে। শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরের সে প্রদর্শনীতে দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়।
জাদুঘরের সাতশ আসনের অডিটোরিয়ামে আরও প্রায় তিন-চার শতাধিক দর্শক দাঁড়িয়ে ছবিটি দেখেন। এছাড়া অনেক দর্শক আসন না পেয়ে চলে যান।
দর্শক প্রশংসায় ভাসলেও প্রিমিয়ার শেষে পরিচালক সুমন আক্ষেপ নিয়ে বলেন, আমাদের সিনেমাটি অনেক সিনেমা হল মালিক নিতে ভয় পাচ্ছেন। তাদের ধারণা এ ধরনের সিনেমা দর্শকরা দেখে না। কিন্তু তাদের সে ধারণা মিথ্যে প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের সিনেমারও দর্শক রয়েছে।
এই নির্মাতা আরো বলেন, শুধু সিনেমা হল থেকে নয় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোও আমাদের সিনেমাকে স্পন্সর করতে রাজি হয়নি। কারণ তাদের কাছে কৃষক হচ্ছে ব্র্যান্ডিংয়ের জায়গা থেকে সর্বনিম্ন জায়গা। অথচ এদেশে কৃষক হচ্ছে সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড।
সিনেমার নায়িকা আইনুন পুতুল প্রিমিয়ার শেষে দর্শকদের অভিনন্দনে আপ্লুত হয়ে পড়েন। আবেগজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমাদের সিনেমাটি ভারতের গোয়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছিলো। আমার মা অসুস্থ থাকায় আমি যেতে পারিনি। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে এটা গোয়া-অস্কারের চেয়ে কম কিছু না।
সিনেমাটির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন আইনুন পুতুল ও ফজলুল হক।
এর গল্পে দেখা যাবে, গ্রামের কৃষক ফজলু বিয়ের পর বুঝতে পারে নতুন সংসারে পুতুল একাকিত্ব অনুভব করছে। পুতুলের একাকিত্ব দূর করতে ফজলু একটি গাভী কিনে আনে। পুতুল তার সংসারে নতুন সঙ্গী পেয়ে বাবার বাড়ি ছেড়ে আসার কষ্ট গুলো কিছুটা ভুলতে শুরু করে।
এই দিকে নদীর উজানে একের পর এক বাঁধের কারণে ভাটি অঞ্চল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন প্রতিকূল পরিবেশে ফজলুর মত কৃষকদের কৃষি কাজে নানান সমস্যা সম্মুখীন হতে হয়। অবিরাম বৃষ্টিপাত আর উজানের ঢল এসে উপচে না পড়া পর্যন্ত বাঁধগুলোর দরজা বন্ধ রাখা হয়। আবার বাঁধের দরজাগুলো খুলে দিলে আটকে থাকা বিশাল জলধারা নদীতে প্রবাহিত হতে শুরু করে।
নদীর গভীরতা কম থাকায় হঠাৎ প্রবাহিত জলধারা নিম্নাঞ্চলে প্লাবিত হয়ে পশু-পাখিসহ জনজীবনে অভিশাপ বয়ে আনে। নদীর এমন বিরূপ আচরণে ফজলু এবং পুতুলের সুখি সংসার বিষাদময় হয়ে উঠে।
সিনেমাটিতে পুতুল ও ফজলুল ছাড়াও অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন মো. সালাউদ্দিন, সাবেরা ইয়াসমিন, স্বাক্ষ্য শাহীদ, শ্রাবণী দাস রিমি, তাসমিতা শিমু, মিতু সরকার, ফারুক শিয়ার চিনু, আফ্রিনা বুলবুল, রুবল লোদী, কামরুজ্জামান রাব্বী, আব্দুল আজিজ মন্ডল, বিধান রায়, জুলফিকার চঞ্চল, বিনয় প্রসাদ গুপ্ত, সুপিন বর্মণ, রেফাত হাসান সৈকত, আব্দুল্লাহ আল সেন্টু, আলমগীর কবীর বাদল, রবি দেওয়ান, দীনবন্ধু পাল, হামিদ সরকার, মোঃ হানিফ রানা, আকতার হোসেন, আজিজুল হাকিম শিউস, সাইফুল ইসলাম লিটন, রাসেল তোকদার, মজনু সরকার, আবু কালাম, সিদ্দীক আলী, সুজন মাহমুদ, তাহসিনা আকতার তন্বী, নিশাত তাহিয়াত মিমন এবং তিস্তাবাজার এলাকাবাসী।
আইডিয়া এক্সচেঞ্জের ব্যানারে ‘সাঁতাও’ প্রযোজনা করেছেন শরিফ উল আনোয়ার সজ্জন। পরিচালনার পাশাপাশি কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন খন্দকার সুমন। সম্পাদনা, রং-বিন্যাস, এফেক্ট ও টাইটেল, সাউন্ড ডিজাইন ও সাউন্ড মিক্সিং করেছেন সুজন মাহমুদ। শব্দ গ্রহণে ছিলেন নাহিদ মাসুদ।
চিত্রগ্রহণে ছিলেন সজল হোসেন, ইহতেশাম আহমদ টিংকু ও খন্দকার সুমন। আবহ সংহীত করেছেন মাহমুদ হায়াৎ অর্পণ। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন কামরুজ্জামান রাব্বী, লায়লা তাজনূর সাউদী, লিমা হক। শিল্প নির্দেশনা দিয়েছেন রবি দেওয়ান।
পোশাক পরিকল্পনায় ছিলেন আফ্রিনা বুলবুল। নৃত্য পরিচালনা করেছেন ফাহিম রায়হান। রূপসজ্জা করেছেন ফরহাদ রেজা মিলন ও পোস্টার ডিজাইন করেছেন সাজ্জাদুল ইসলাম সায়েম।
‘সাঁতাও’ আগামী ২৭ জানুয়ারি মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে।
Views: 5
Leave a Reply