1. nasiralam4998@gmail.com : admi2017 :
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:০৭ পূর্বাহ্ন

মুমিনুলকে আদর্শ মেনে ক্রিকেটে পা মাড়ানো জাকিরের শুরুটাও তেমনই উজ্জ্বল

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ১০৯ বার

মুমিনুল হকের জাতীয় দলে অভিষেকের পর খুব খুশি হয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। অন্তত কেউ তো তার উচ্চতার থেকে পিছিয়ে আছে! সেই মুমিনুলকে দেখে প্রাণে সঞ্চার হয়েছিল পুচকে জাকির হাসানেরও।

কিভাবে?

জাকির হাসান যখন কথগুলো বলছিলেন তখন তার নামের পাশে যোগ হয়ে গেছে একটি টেস্ট শতক। যে শতকে ২৪ বছর বয়সী সেনানী হয়ে ঢুকে গেছেন মুমিনুল হকের রাজ্যে। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম মুমিনুলের ঘাঁটি। যার ১১ টেস্ট শতকের সাতটিই এই ২২ গজে। নিজের বিভাগীয় শহরে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে ১৮১ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেছিলেন মুমিনুল।

তাকে আদর্শ মেনে ক্রিকেটে পা মাড়ানো জাকিরের শুরুটাও তেমনই উজ্জ্বল। সাদা পোশাকে তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথ চলা শুরু হলো এই ভেন্যুতে। প্রথম ইনিংসে ২০ করে আশার প্রদ্বীপ জ্বালিয়েছিলেন। সেই প্রদ্বীপ থেকেই ধুয়ো হয়ে সেঞ্চুরি বেরিয়ে এলো দ্বিতীয় ইনিংসে। বাঁহাতি ব‌্যাটসম‌্যান দেখালেন নিজের কারিশমা। চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা, দৃঢ় চেতা মনোবল, জমাট ব‌্যাটিংয়ে তিন অঙ্কের ম‌্যাজিকাল ফিগার ছুঁয়েছেন বাংলাদেশের ১০১তম টেস্ট ক্রিকেটার।

বাংলাদেশের জন‌্য আজকের লড়াই ছিল ধৈর্য্য দেখানোর, নিজেদের শান্ত রাখার। সেই লড়াইয়ে শান্ত, জাকির ফুল মার্কস পেলেও ইয়াসির, মুশফিক, সোহানরা তাদের অবদানকে স্রেফ এলোমেলো করে দিয়েছেন। গতকালের ৪২ রানের সঙ্গে জাকির ও শান্তর জুটির রান ১২৪ ছুঁয়েছে। ভারতের বিপক্ষে যা বাংলাদেশের প্রথম উদ্বোধনী জুটিতে শতরানের ঘটনা।

তাদের জমাট ব‌্যাটিংয়ে প্রথম সেশনে কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। উল্টো ভারতকে প্রবল চাপে রেখেছিল। এ সময়ে দুজনই তুলে নেন ফিফটি। এগিয়ে যান তরতরিয়ে। কিন্তু দ্বিতীয় সেশনে ২৯ ওভারের খেলায় ছন্দপতন। বিরতি থেকে ফিরে শান্ত আবারও অফস্টাম্পের বাইরের বল খোঁচা দিয়ে আউট। গতকাল ও আজ বেশ ভালোভালে পেসার ও স্পিনারদের অফস্টাম্পের বাইরে সামলেছিলেন। কিন্তু নিজের দুর্বল জায়গাতেই ঘুরে-ফিরে আউট শান্ত (৬৭)।

ইয়াসির ও লিটন আউট হয়েছেন বাজে শটে। কোনো লড়াই না করে। অক্ষরের ঘূর্ণিতে বোল্ড হন ইয়াসির (৫) । কুলদীপের বলে অযথা আক্রমণে গিয়ে উমেশের হাতে ক‌্যাচ দেন লিটন (১৯) । মধ‌্যদুপুরে বাংলাদেশ অপেক্ষায় ছিল জাকিরের সেঞ্চুরির। সঙ্গী ও সতীর্থ হারানোর পর পথ ভোলেননি এ ক্রিকেটার। কর্তৃত্ব, আগ্রাসন, স্বকীয়তা দেখিয়ে চতুর্থ বাংলাদেশি ক্রিকেটার ও প্রথম ওপেনার হিসেবে অভিষেকে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন। তার এই সেঞ্চুরিতে মিশে আছে নিজেকে পাল্টে ফেলার পরিশ্রম, নিবেদন।

ব‌্যাটিংয়ের ধরণ টি-টোয়েন্টি মানানসই বলে তাকে পাঁচ বছর আগে সুযোগ দিয়েছিল জাতীয় দলে। জায়গা থিতু করতে পারেননি। পরবর্তীতে টেস্ট ক্রিকেটে মনোযোগী হন। কিন্তু নিজেকে স্থির করতে পারেননি। টি-টোয়েন্টি স্বভাবসুলভ ব‌্যাটিং করায় সেখানেও ভালো করতে পারছিলেন না। কিন্তু এবার হাল ছাড়েননি। খেলার ধরণ পরিবর্তন করে সাদা পোশাক ও লাল বলে নিজেকে মানিয়ে নেন। এরপর ছুটতে থাকে তার রান ফোয়ারা।

২০২১ বর্ষপঞ্জিকায় এক হাজার রান করে আলোচনায় আসেন। এবার ঘরোয়া ক্রিকেটে ৪৪২ রান করে নিজের অবস্থান শক্ত করেন। এরপর ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে তার ম‌্যাচ বাঁচানো ও মাটি কামড়ানো ১৭৩ রানের অবিশ্বাস‌্য ইনিংসে খুলে যায় জাতীয় দলের দরজা।

সেঞ্চুরিয়ান জানালেন, কক্সবাজারে খেলা ইনিংসটিই তার আজ মাথায় ঘুরছিল, ‘ওই ইনিংসটার জন্য আত্মবিশ্বাস ছিল মনের ভেতরে। ওই প্রক্রিয়া অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করছিলাম। ব্যাক অফ দ্য মাইন্ডে ছিল, সামনেও এই প্রক্রিয়া ঠিক রেখে খেলার চেষ্টা করব।’

সেঞ্চুরির পর উদযাপনে তেমন বাড়তি কিছু করেননি জাকির। সঙ্গী মুশফিক তাকে জড়িয়ে ধরেন। হেলমেট খুলে হাসি দিয়ে ব‌্যাট তাক করান ড্রেসিংরুমের দিকে। তবে তিন মিনিটের পরই তাকে কঠিনতম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। শতরানেই শেষ তার ইনিংস। অশ্বিনের বলে স্লিপে ক‌্যাচ দিয়ে ফিরে আসেন ড্রেসিংরুমে।

জাকির বুঝতে পেরেছিলেন, থিতু হওয়া ব‌্যাটসম‌্যান আউট হলে নতুন ব‌্যাটসম‌্যানের জন‌্য লড়াইটা কঠিন হবে। এজন‌্য আজকের দিনটা শেষ করে আসতে চেয়েছিলেন। নিজের কাজটা অসম্পূর্ণ থাকায় সেঞ্চুরি করেও মুখটা মলিন জাকিরের, ‘ভালো লেগেছে আসলে (সেঞ্চুরি)। আর কিছুই না। আউট হওয়ার পর হতাশ ছিলাম। আমি চাচ্ছিলাম দলের জন্য আরও যদি একটু লম্বা ব্যাটিং করা যায়। আজকের দিনটা যদি আমিই পার করতে পারি।’

জাকির ফেরার পর মুশফিক অক্ষরের বলে বোল্ড হন। সোহান হন স্টাম্পড। দিনের শেষ ১৪ ওভার কাটিয়ে দেন সাকিব ও মিরাজ। তাদের ব‌্যাটে টেস্টের পঞ্চম দিনে ভালো কিছুর আশায় এই সেঞ্চুরিয়ান, ‘সাকিব ভাই ও মিরাজ যেভাবে ব্যাটিং করছে আশা করি তারা যদি খেলতে পারে আরও একটু, তাহলে আমাদের লক্ষ্যেও পৌঁছানো সম্ভব।’

জাকিরের সেঞ্চুরি ও শান্তর ফিফটির পরও ম‌্যাচটা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। ৫১৩ রানের বিশাল লক্ষ‌্য তাড়ায় ৬ উইকেটে বাংলাদেশের রান ২৭২। দল পিছিয়ে আছে ২৪১ রানে। সাকিব ও মিরাজ থিতু হয়েছেন। পঞ্চম দিনে তাদের দিকেই তাকিয়ে গোটা বাংলাদেশ।

ভারতের চট্টগ্রামে বিজয়ের পতাকা উড়াতে প্রয়োজন কেবল ৪ উইকেট। পুরোদিন হাতে রেখে কাজটা সহজই হওয়ার কথা লোকেশ রাহুলদের।

মুমিনুলের রাজ‌্যে প্রবেশের দিনে নিজের আইডলকে কেবল ড্রেসিংরুমেই পেয়েছেন জাকির। চরম অফফর্মে থাকা মুমিনুল জায়গা হারিয়েছেন একাদশে। তবুও রাজ‌্য এখনও তারই দখলে। এই রাজ‌্য একদিন জাকিরের হয় কিনা সেটাই দেখার।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..