খুলনার আলোচিত সেই নিখোঁজ রহিমা বেগমকে ২৯ দিন পর শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
রাত আড়াইটার দিকে তাকে খুলনার দৌলতপুর থানায় আনা হয়। খুলনা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে রহিমা বেগমকে উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি জানান, গোয়েন্দা তদন্তের ভিত্তিতে জানতে পারি নিখোঁজ রহিমা ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি অবস্থান করছেন, ওই তথ্যের ভিত্তিতে কেএমপির একটি টিম তাকে উদ্ধারের উদ্দেশ্যে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে পৌঁছান এবং ওই বাড়ি থেকেই অক্ষত অবস্থায় রহিমাকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া বাড়িতে তিনি গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে অবস্থান করছিলে বলে জানিয়েছেন কুদ্দুসের স্বজনরা।
এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উদ্ধার হওয়া বাড়ি থেকে একজন পুরুষ ও দুই মহিলাকে হেফাজতে নিয়েছে। তবে রহিমা কিভাবে নিখোঁজ হলেন কিংবা নিজেই আত্মগোপনে ছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রহিমা প্রাথমিকভাবে পুলিশকে কিছুই জানাননি, কেবলমাত্র চোখের পানি ফেলেছেন।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু ভিকটিমকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, আর মামলাটি তদন্ত করেছে পিবিআই। সুতরাং পিবিআইয়ের তদন্তে ভিকটিমের নিখোঁজ বা আত্মগোপনের বিষয়ে তদন্ত করলে আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
রহিমা বেগমের জীবিত উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে তার ছেলে সাদী বলেন, যেহেতু আমার মা জীবিত উদ্ধার হয়েছে, সেহেতু তার মুখে নিখোঁজের বিষয়টি জানলে তিনি ভালো বলতে পারবেন। ওই ঘটনায় যদি আমার পরিবারের কেউ জড়িত থাকে তবে প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
এ বিষয়ে রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নান ফেসবুকে স্ট্যাটাসে বলেছেন, পুলিশের পক্ষ থেকে ফোন করে তার মাকে উদ্ধার করার কথা জানানো হয়েছে।
এর আগে নিখোঁজ মাকে ফিরে পাওয়ার দাবিতে গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে কান্নায় ভেঙে পড়েন মরিয়ম মান্নান। সর্বশেষ তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে ফেসবুকে তার মায়ের লাশ পাওয়া গেছে বলে আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন। তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা ময়মনসিংহের ফুলপুর থানায় পৌঁছান। সেখানে দাফন হওয়া লাশের জব্দকৃত পোশাক দেখে মরিয়ম মান্নান তার মায়ের লাশ বলে দাবি করেন।
পুলিশ জানায় কেবলমাত্র ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে ওই লাশ তার মায়ের কিনা তা জানা সম্ভব। ইতিমধ্যেই মরিয়ম মান্নান ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ২৭ আগস্ট রাত ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার বাসার উঠানের নলকূপে পানি আনতে যান রহিমা বেগম। কিন্তু এক ঘণ্টা পরও তিনি বাসায় না ফেরায় তার সন্তানেরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। নলকূপের পাশে তাদের মায়ের জুতা, ওড়না ও পানির পাত্র পড়ে থাকলেও মাকে তারা খুঁজে পাননি। এ ঘটনায় ওই রাতেই রহিমা বেগমের ছেলে দৌলতপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরদিন তার মেয়ে আদুরী আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় অপহরণ মামলা করেন।
এ মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মায়ের সন্ধান চেয়ে ঢাকায় মানববন্ধনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে আসছিলেন তার সন্তানরা।
Views: 3
Leave a Reply