অনলাইন ডেস্ক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের নেতৃত্বে ছিলেন স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেবের তিন ছেলে। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ইতোমধ্যে হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ হিসেবে পুলিশের কাছে ওই নেতার তিন ছেলের ভিডিও ফুটেজ এসে পৌঁছেছে। এরই মধ্যে এক ছেলেকে মামলার এজহারভুক্ত আসামি করেছেন সরাইল থানা পুলিশ। বাকি দুজনকে এজাহারভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
ঘটনার অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে রাজধানীর ঢাকার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ ও চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা ছাত্রদের ওপর পুলিশের হামলার খবরে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, সরাইল ও আশুগঞ্জে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। ২৭ মার্চ বিকেলে উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের বাজার এলাকায় মোদিবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল করেন সেখানকার হেফাজতকর্মীরা।
সেদিন সেখানে তিন দিক থেকে মিছিল এসে বাজার এলাকায় মিলিত হয়। একপর্যায়ে জঙ্গি স্টাইলে মিছিলটি অরুয়াইল পুলিশ ক্যাম্পে হামলা চালায়। এতে সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) কবীর হোসেন ও অরুয়াইল পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জসহ অন্তত ২৫ পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ঘটনার পর ৬৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও অন্তত ১২ জনকে আসামি করে সরাইল থানায় মামলা দায়ের করে পুলিশ। এ মামলার এজাহার নামীয় ৩০ নম্বর আসামি আওয়ামী লীগ নেতা আবু তালেব মিয়ার ছোট ছেলে ইসমাইল হোসেন। তার আরও দুই ছেলে হাফেজ যাকারিয়া মাহমুদ ও ইউনুস মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন। ইতোমধ্যে তাদের জড়িত থাকার ছবি ও ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এ নিয়ে চলছে নানা মুখরোচক আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
এদিকে হামলার ঘটনার অবাধে চলাফেরা করতে দেখা গেছে হেফাজতের হামলার নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের সভাপতির ছেলে ও পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা মামলার অন্যতম আসামি ইসমাইল হোসেনকে। একইভাবে চলাফেরা করছেন অপর দুই ছেলে হাফেজ যাকারিয়া মাহমুদ ও ইউনুস মিয়া।
ভিডিও ফুটেজসহ নিজ ছেলেদের হেফাজতে তাণ্ডবে জড়িত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে অরুয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেব মিয়া সাংবাদিকদের জানান, এটি এলাকার লোকজনের ষড়যন্ত্র। আমাদের প্রতিপক্ষরা আমাদের সুনামে ঈর্ষান্বিত হয়ে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমার পরিবারের কেউ বিক্ষোভ মিছিলে যায়নি। অরুয়াইল বাজারে আমাদের এক শতাধিক দোকানপাট রয়েছে। বিক্ষোভকারীরা যেন আমাদের দোকানে কোনো হামলা না করতে পারে সেই জন্য আমার ছেলেরা সেদিন পাহারায় ছিল। হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছিল।
তার ছেলেদের ছবি, ভিডিওতে দেখা যাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ধামাউড়া গ্রাম থেকে আসা মিছিলের লোকজন এখানে তাণ্ডব চালিয়েছে। আমার ছেলেরা জড়িত নয়। এ ব্যাপারে পুলিশ অবগত আছে।
এদিকে হেফাজতের হামলার ঘটনার পর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত অরুয়াইল পুলিশ ক্যাম্পটি বন্ধ রয়েছে। ফলে সরাইল থানা থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরবর্তী এলাকায় পুলিশ আসার আগেই খবর পেয়ে আসামিরা পালিয়ে যায়। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের আইনের আওতায় আনার কথা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান জানান, পুলিশ ক্যাম্পে হামলা মামলায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু তালেব মিয়ার ছেলের নাম এ মামলার এজাহারে রয়েছে। তাকেও গ্রেফতার করতে অভিযান চালছে।
ঘটনা সম্পর্কে ও হামলায় আহত সরাইল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) কবির হোসেন বলেন, ‘আমরা ঘটনার সময়ের ভিডিও ফুটেজগুলো পর্যালোচনা করে হামলার সঙ্গে জড়িত স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেবের তিন ছেলেকে শনাক্ত করতে পেরেছি। এর মধ্যে এক ছেলেকে ইতিমধ্যে মামলার আসামি করা হয়েছে। বাকিদের বিষয়েও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
এ ব্যাপারে সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নাজমুল হোসেনে কাছে জানাতে চাইলে তিনি বলেন, অরুয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আবু তালেবের ৩ ছেলে হেফাজতের হামলা ভাঙচুর এবং স্থানীয় অরুয়াইল পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি আমরা ইতোমধ্যে অবগত হয়েছি। বিষয়টি আমরা দলগতভাবে খতিয়ে দেখছি। জড়িত থাকার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ধরনের নেতা দলের প্রয়োজন নেই। আমরা তার ছেলেদের ব্যাপারে খতিয়ে দেখে দ্রুত সময়ের মধ্যে তার বিরুদ্ধে জেলা কমিটির কাছে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সুপারিশ করব।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, অরুয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেবের ছেলেদের জড়িত থাকার বিষয়টি ইতোমধ্যে অবগত হয়েছি। সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৬ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত তাণ্ডবের ঘটনায় জেলায় মোট ৫৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় ৪৯টি, আশুগঞ্জ থানায় ৪টি, সরাইল থানায় ২টি এবং আখাউড়া রেলওয়ে থানায় ১টি মামলা দায়ের করা হয়। ৫৬টি মামলায় ৪১৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা ৩০ থেকে ৩৫ হাজার লোককে আসামি করা হয়। পুলিশ সোমবার (১৯ এপ্রিল) রাত পর্যন্ত এ সকল মামলায় মোট ৩১৭ জনকে গ্রেফতার করে। সময় টিভি
দর্শনা নিউজ 24/এইচ জেড
Views: 3
Leave a Reply