রিয়া গোপ নামের ছয় বছরের ফুটফুটে শিশুটি সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখতো। এ বছর নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। ঘরের বাইরে তার খেলার জায়গা বলতে বাড়ির খোলা ছাদ। প্রতিদিনের মতো শুক্রবার (১৯ জুলাই) দুপুরের খাবার খেয়ে ছাদে যায় রিয়া। কিন্তু হঠাৎ ভবনের নিচে ও চারপাশে হৈচৈ, চিৎকার চেঁচামেচি আর গুলির শব্দ শুনে দৌড়ে ছাদে যান মেয়েকে ঘরে আনতে দীপক কুমার গোপ। মেয়েকে কোলে তুলে নিতেই বুলেট এসে বিদ্ধ হয় রিয়ার মাথায়। মুহূর্তেই ঢলে পড়ে বাবার কোলে।
দ্রুত রিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে। চিকিৎসক তার অবস্থার অবনতি দেখে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। রাতেই মাথায় অস্ত্রোপচার হয়। সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে বলে জানান চিকিৎসকরা।
রিয়াকে রাখা হয় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। বলা হয়, ৭২ ঘণ্টার আগে কিছু বলা যাবে না। অস্ত্রোপচারের পর শনিবার পার হয়। রোববার ও সোমবার আইসিইউতে একটু একটু করে আঙ্গুল নাড়ছিলো রিয়া। স্বজনদের বুকে আশার সঞ্চার হয়েছিলো। কিন্তু বুধবার সকালের দিকে রিয়ার সেই নড়াচড়াও থেমে যায়। সবাইকে কাঁদিয়ে রিয়া চলে যায় না-ফেরার দেশে। রিয়ার মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয় বুধবার সন্ধ্যার দিকে। ওইদিন রাতেই শহরের মাসদাইর শ্মশানে সৎকার করা হয় রিয়াকে।
নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটি এলাকায় পাঁচতলা দ্বীনবন্ধু মার্কেটের পঞ্চম তলায় পরিবার নিয়ে থাকেন দীপক কুমার গোপ। দীপক কুমার গোপ ও বিউটি ঘোষ দম্পতির একমাত্র সন্তান ছিলো রিয়া। বিয়ের পাঁচ বছর পর এ দম্পতির ঘর আলো করে আসে রিয়া।
পারিবারিক তথ্যমতে, শুক্রবার (১৯ জুলাই) দুপুরের পর থেকে শহরের ডিআইটি এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছিল পুলিশের। পরিস্থিতি দেখার জন্য পরিবারের সদস্যরা ছাদে যায়। সঙ্গে রিয়াও যায়। কিছুটা সময় দেখে তারা সবাই বাসায় চলে আসে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য। এরমধ্যে রিয়া খাবার খেয়ে আবারো ছাদে যায় খেলতে। খানিক পরে গুলির শব্দ পেয়ে দৌড়ে ছাদে যান মেয়েকে ঘরে আনতে বাবা দীপক কুমার। মেয়েকে কোলে তুলে নিতেই বুলেট এসে রিয়ার মাথায় লাগে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রিয়ার মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয়, ‘গানশট ইনজুরি’।
স্থানীয়রা জানান, বাড়ির তিনদিকে অন্যান্য বিল্ডিংয়ের কারণে শুধু পশ্চিম দিকে খোলা। ফলে ছাদ থেকে ডিআইটি এলাকায় গুলশান সিনেমাহল দেখা যায়। ওই খান থেকেই গুলি এসে শিশু রিয়ার মাথায় বিদ্ধ হয়।
রিয়ার বাবা দীপক কুমারের সঙ্গে কথা হলে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কি আর বলবো? আমরা নিজের বাসায়ই তো নিরাপদ না। আমার একমাত্র মেয়ে মারা গেছে। আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমি কি নিয়ে বাঁচবো? আমার আর কিছুই রইলো না।
তিনি আরও বলেন, শুক্রবার মেয়ে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছে রিয়ার মা বিউটি ঘোষ। তাকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
Views: 4
Leave a Reply