ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আবাসিক হল এলাকায় ছাত্রলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বঙ্গবন্ধু হল, বিজয়-৭১ ও জিয়াউর রহমান হলে সোমবার (১৫ জুলাই) সাড়ে ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সহকারী সমন্বয়ক মাহিন সরকার আহত হয়েছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে বাকিদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
এদিকে, ঘটনার সময় উভয় পক্ষকে লাঠিসোঁটা হাতে দেখা গেছে। ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (৪টা ১০ মিনিট) ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় ক্যাম্পাসে উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছে।
বিজয়-৭১ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির বলেন, হলের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি নজরে রাখছি।
এদিকে, মল চত্বরেও কোটা আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরে আন্দোলনকারীরা ভিসি চত্বরে অবস্থান নেন। অন্যদিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মল চত্বরে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
শাহবাগ থানার ওসি (অপারেশন) আরশাদ হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ঘটনার কারণ বা হতাহতের খবর এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। এলাকায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি।
যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় ৭১ হলে শুরু উত্তেজনার সূত্রপাত। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকে রাজু ভাস্কর্যের দিকে আসার জন্য রওনা দেওয়ার চেষ্টা করলে বাধা দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। খবর পেয়ে সেখানে আন্দোলনকারীরা যাওয়ার পর শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া।
সোমবার বিকেল ৩টা থেকে মুখোমুখি অবস্থান নেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পরবর্তীতে সেটা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
সর্বশেষ সাড়ে ৪টার খবর অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে ছাত্রলীগ অবস্থান নিয়েছে। আর ধাওয়ার মধ্যে রাজু ভাস্কর্য ও নীলক্ষেতের দিকে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা এখন ক্যাম্পাসছাড়া। এ ঘটনায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুরো ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ছাত্রলীগ।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিজয় ৭১ হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপরে হঠাৎ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। পরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। মুহূর্তেই ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। হকিস্টিক, রড, স্টাম্প নিয়ে বঙ্গবন্ধু, জিয়া, একাত্তর হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আন্দোলনকারীদের ওপরে আক্রমণ করতে দেখা যায়। ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর অধিকাংশরাই ছিলেন হেলমেট পরিহিত।
ছাত্রলীগের নেতৃত্বে দেখা যায় ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে। ঢাকা মহানগর উত্তর, ঢাকা জেলা উত্তর-দক্ষিণ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় অংশ নেয়।
তবে, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার পর ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, কোটা আন্দোলনকারীদের হামলায় ছাত্রলীগেরই বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বিজয় ৭১ হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদেরই জিম্মি করা হয়েছিল। ওপর থেকে জুতা মারা হয়েছিল সেটা আমাদের নয় কোটা আন্দোলনকারীদের। অনেকে আহত হয়েছেন। অনেকের মাথা ফেটে গেছে।
আন্দোলনকারী আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের আন্দোলনরত অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তাদের ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পেটানো হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবেই আমাদের কর্মসূচি চলছিল। এরমধ্যে উস্কানিমূলকভাবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই আক্রমণ শুরু করে।
সরকারি চাকরিতে ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে পুনরায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সমাবেশে মিলিত হওয়ার কথা রয়েছে।
বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীদের ‘কোটা না মেধা? মেধা মেধা’, ‘কে রাজাকার কে রাজাকার, তুই রাজাকার তুই রাজাকার’, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, রাষ্ট্র কারো বাপের না’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘আমার স্বাধীন বাংলায়, একের কথা চলে না’, ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি’, ‘লাখো শহিদের রক্তে কেনা, দেশটা কারও বাপের না’, ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, হামলা/মামলা দিয়ে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
Views: 5
Leave a Reply