বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে দেশের পুঁজিবাজারে গত কয়েক বছর ধরে মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ফলে পুঁজিবাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ অনেকটাই কমে এসেছে। ফলে চলতি বছরে বিনিয়োগকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব খোলার পরিমাণ গত বছরের তুলনায় ৪.৯৪ শতাংশ কমেছে। একইসঙ্গে বছরজুড়ে পুরুষদের পাশাপাশি নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যাও আশঙ্কাজনক হারে কমেছে।
তথ্য মতে, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যে ২০২০ সালের ১৭ মে বিএসইসি তথা শেয়ারবাজারের হাল ধরেন অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তার সঙ্গে কমিশনার হিসেবে বিএসইসিতে যোগদান করেন সাবেক শিল্প সচিব আব্দুল হালিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দীন আহমেদ ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন্স সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। বিএসইসিতে যোগদানের এক বছরের মধ্যে নতুন এই কমিশনের উদ্যোগী কর্মকাণ্ড এবং কর্ম তৎপরতায় শেয়ারবাজারে গতি ফিরে এসেছে। একইসঙ্গে হারোনো আস্থা ফিরে পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
তবে ২০২১ সালের অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পুঁজিবাজারে পতনমুখী প্রবণতা দেখা দেয়। এরপর ২০২২ সালের শুরু থেকে বৈশ্বিক মন্দাসহ বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারে মন্দা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। চলতি বছরের শেষ সময় পর্যন্ত মন্দাভাব থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি পুঁজিবাজার।
ফলে বাজারের পতনমুখী প্রবণতা ও বিভিন্ন কারণে চলতি বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিও হিসাব খোলার পরিমাণ ৮.৭১ শতাংশ কমেছে। একইসঙ্গে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব খোলার পরিমাণ কমেছে ৮.১৭ শতাংশ। আর নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব খোলার পরিমাণ কমেছে ১০.৪০ শতাংশ।
পুঁজিবাজারের তথ্য ভাণ্ডার হিসাবে পরিচিত সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৩২৯টি। আর ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৫৪ হাজার ১২৩টি। সে হিসেবে বছরের ব্যবধানে বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ৯১ হাজার ২০৬টি বা ৪.৯৪ শতাংশ।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি একক বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৮৩ হাজার ৭২৬টি। আর ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত একক বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৪১ হাজার ৪০৬টি। সে হিসেবে একক বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ৪২ হাজার ৩২০টি বা ৩.৩০ শতাংশ।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি যৌথ বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৬১ হাজার ৬০৩টি। আর ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যৌথ বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ১২ হাজার ৭১৭টি। সে হিসেবে যৌথ বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ৪৮ হাজার ৮৮৬টি বা ৮.৭০ শতাংশ।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি নারী বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবে সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৫৫ হাজার ১০৭টি। আর ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নারী বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৬২৬টি। সেহিসেবে নারী বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবে সংখ্যা কমেছে ২৬ হাজার ২৫৮টি বা ৫.৭৭ শতাংশ।
তবে বছরজুড়ে নিষ্ক্রিয় বিও হিসাবের পরিমান কমে এসেছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি নিষ্ক্রিয় বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৭৬ হাজার ২২৪টি। আর ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিষ্ক্রিয় বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭১ হাজার ২১৬টি। সে হিসেবে নিষ্ক্রিয় বিও হিসাবের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮টি বা ৬.৫৭ শতাংশ।
Views: 27
Leave a Reply