আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্য থেকে বাংলাদেশের ডাক বিভাগের বৈদেশিক শাখায় পার্সেলের মাধ্যমে আসছে উচ্চমূল্যের মাদক। এসব মাদক তরুণ বয়সী একটি সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে রাজধানীর অভিজাত এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনই একটি চক্রের সদস্যদের প্রায় কোটি টাকার মাদকসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সোমবার (২২ এপ্রিল) অভিযান চালিয়ে জব্দ করা হয়েছে টেট্রাহাইড্রো ক্যানাবিনলযুক্ত কুশ (বিশেষ ধরনের গাঁজা) ও গাঁজার তৈরি চকলেট ও কেক। গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিন জনকে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) ঢাকা মেট্রোপলিটন কার্যালয় (উত্তর) মাদকসহ তাদের আটক করে।
ডিএনসি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া থেকে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের বৈদেশিক শাখায় খেলনা বাক্সের একটি পার্সেল আসে। গোয়েন্দা তথ্যে ভিত্তিতে পার্সেলটি জব্দ করা হয়। পরে বক্সটি খুলে দেখা যায়, খেলনার বাক্সে উচ্চমূল্যের মাদক টেট্রাহাইড্রো ক্যানাবিনলযুক্ত কুশ, গাঁজার চকলেট ও কেক। যার বাজার মূল্য প্রায় কোটি টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) মহাপরিচালক (ডিজি) মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী
পার্সেলে একটি ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর দেওয়া ছিল। তবে ঠিকানাটা ছিল ভুল। তাই মোবাইল নম্বর ধরে অভিযান চালায় ডিএনসি। পরে সাভার আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সংশ্লিষ্ট তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন—মো. রাসেল মিয়া (২০), রমজান মিয়া (২১) ও মো. ইমরান ওরফে রাজ (২০)।
পার্সেলের ভেতরে ছয়টি প্যাকেটে ছিল টেট্রাহাইড্রো ক্যানাবিনলযুক্ত কুশ (আমেরিকার তৈরি), যার ওজন এক কেজি ৩০০ গ্রাম। এ ছাড়াও আমেরিকায় তৈরি গাঁজার ৯টি চকলেট ও গাঁজার ১০টি কেক।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ডিএনসির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক (ডিজি) মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী। তিনি বলেন, রোববার (২১ এপ্রিল) পল্টনের পুরাতন ডাক ভবনের বৈদেশিক ডাকের সিইডি/ডিসিএল শাখা থেকে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে খেলনার বক্সে করে আসা প্রায় কোটি টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ করা হয়।
পার্সেলে থাকা মোবাইল নম্বর ধরে প্রযুক্তির সহায়তায় আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রথমে রাসেল মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, পার্সেলটি তিনি ডেলিভারি নেবেন। পরে তার কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে রিসিভ করার কথা ছিল রমজান মিয়ার। পরে আশুলিয়ার আমতলা এলাকা থেকে রমজানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রমজান জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তাকে টাকার বিনিময়ে পার্সেলটি রিসিভ করতে বলেন মো. ইমরান ওরফে রাজ। এরপর আমতলা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয় রাজকে। তারা দুই জন বন্ধু।
মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী আরও বলেন, যে প্যাকেটে করে মাদকগুলো আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে এসেছিল সেগুলো ছিল বাচ্চাদের খেলনার প্যাকেট। এটা করার কারণ যাতে করে কেউ বুঝতে না পারে এসব প্যাকেটে মাদক রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে এভাবে বিদেশ থেকে গাঁজার কেক, কুশ ও চকলেট এনে রাজধানীরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে আসছিল।
গ্রেপ্তারকৃতরা
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিজি বলেন, ক্যালিফোর্নিয়ায় এ মাদক বৈধ কিংবা অবৈধ সেটি বিষয় না। বাংলাদেশে এই মাদক অবৈধ, তাই বাংলাদেশে এই মাদক পাঠানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। বাংলাদেশে এটা অবৈধ জেনেই তারা বাচ্চাদের খেলনার প্যাকেটে মাদক পাঠিয়েছে। এই পার্সেলটি যে কোনও আমেরিকান নাগরিক পাঠিয়েছেন বিষয়টি এমন নয়। ওখানে বসবাসরত অন্য কোনও দেশের নাগরিকও পাঠাতে পারেন।
তরুণরা কীভাবে কোটি টাকার মাদকের কারবার করে আসছিল এমন প্রশ্নের জবাবে ডিজি বলেন, গ্রেপ্তারদের মধ্যে একজন একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মার্কেটিং অফিসার। আমরা তদন্তে জানার চেষ্টা করবো তাদের অর্থের উৎস কী এবং তারা কীভাবে অর্থ সেখানে পাঠিয়েছে। এর সঙ্গে মানিলন্ডারিং জড়িত থাকতে পারে। তাদের পেছনে আরও কেউ আছে কিনা এমন সব বিষয়ে আমরা আরও তদন্ত করব।
Views: 11
Leave a Reply