শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে যশোর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে বেনাপোল এক্সপ্রেস। রাত ৯টায় সায়েদাবাদ এলাকা অতিক্রম করার সময় হঠাৎ আগুন জ্বলে ওঠে ট্রেনটিতে। জীবন্ত অবস্থায় পুড়ে মারা যায় দুই নারী, এক শিশুসহ ৪ জন। শুধু এই চার জনই নয়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে গত ২৮ অক্টোবরের পর ট্রেনে আগুন ও নাশকতায় প্রাণ হারিয়েছেন মোট ৯ জন।
নির্দলীয় সরকারের দাবিতে গত কয়েক মাস ধরে অবরোধ, হরতালের মতো কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এসব কর্মসূচির দিনে বা আগের রাতে ঢাকা ও বিভিন্ন এলাকায় যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বিএনপিকে দায়ী করা হলেও বিএনপি বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন: গত ১৯ ডিসেম্বর বিএনপির হরতালের মধ্যে রাজধানীর তেজগাঁও রেলস্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের তিনটি বগিতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। সেখান থেকে মা ও ছেলেসহ চার জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন: তেজগাঁওয়ে ট্রেনে আগুন, মা-ছেলেসহ ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার
ওই দিন নেত্রকোনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে। ভোর ৪টা ৫৫ মিনিটের দিকে ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশনে যাওয়ার পথে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের কাছে পৌঁছালে এতে আগুন দেখতে পান ট্রেন অ্যাটেনডেন্টরা। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তেজগাঁও স্টেশনের কাছে আগুন নেভানোর পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা চার জনের মরদেহ উদ্ধার করেন।
আরও পড়ুন: মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন : পুড়ে মরাই কি তবে নিয়তি?
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৯ জনকে আটক করে র্যাব।
এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১ এর কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোশতাক আহমেদ বলেন, ‘আটককৃতদের রেলস্টেশন ও রেললাইন সংলগ্ন এলাকায় অপরাধের রেকর্ড আছে। তারা কোনো মহলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য সামান্য অর্থের বিনিময়ে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করে থাকে।’
নীলফামারীর ডোমারে রেললাইনে নাশকতার চেষ্টা: গত ১৪ ডিসেম্বর নীলফামারীর ডোমারে রেললাইনের ৭২টি ক্লিপ খুলে নাশকতার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। তবে এলাকাবাসী সেটা আগেই দেখতে পাওয়ায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায় সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনটি।গাজীপুরে রেললাইন কেটে নাশকতা: গত ১৩ ডিসেম্বর গাজীপুরের ভাওয়ালে রেললাইন কেটে নাশকতা চালায় দুর্বৃত্তরা। রাজেন্দ্রপুর স্টেশন ছেড়ে আসে ঢাকা অভিমুখী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনসহ ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে একজন নিহত হন। এ ঘটনায় একদিন ধরে ওই লাইনে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়েছিল।
দুর্ঘটনার পর গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এটা সাধারণ কোনো দুর্ঘটনা নয়। নাশকতার উদ্দেশ্যে রেললাইন কেটে রাখা হয়। আমরা ঘটনাস্থলে এসে গ্যাস সিলিন্ডার পেয়েছি। রেললাইন কাটার জন্য গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করেছে দুর্বৃত্তরা।’
টাঙ্গাইলে কমিউটার ট্রেনে আগুন: গত ১৬ নভেম্বব টাঙ্গাইল রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি কমিউটার ট্রেনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে ট্রেনের দুটি বগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জামালপুরে ট্রেনে আগুন: গত ১৮ নভেম্বর মধ্য রাতে জামালপুরের সরিষাবাড়ী রেল স্টেশনে যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়। এতে ট্রেনের তিনটি বগি পুড়ে যায়। লাফিয়ে নামতে গিয়ে আহত হন অন্তত ১০ জন।
জয়পুরহাটে উত্তরা মেইল ট্রেনের বগিতে আগুন: গত ১৫ ডিসেম্বর মধ্য রাতে জয়পুরহাটে উত্তরা এক্সপ্রেস মেইলের চলন্ত ট্রেনের একটি বগিতে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুনে ট্রেনের একটি বগির কয়েকটি আসন পুড়ে যায়। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটে।
ঈশ্বরদীতে ট্রেনে আগুন: গত ২৭ নভেম্বর রাতে পাবনার ঈশ্বরদীতে একটি ট্রেনের বগিতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে পুড়ে যায় ট্রেনের ১১টি বগি। এছাড়া, এর আগে ১ নভেম্বর বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর ডাকা অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে ঈশ্বরদীতে কলকাতা-ঢাকা পথে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে ‘হাতবোমা’ নিক্ষেপ করা হয়।
Views: 1
Leave a Reply