অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, মূল্যস্ফীতি স্থিতাবস্থায় আছে, বাড়েনি। শুধু টাকার অঙ্কে বিচার করলে হবে না, সামাজিক সুরক্ষা বিবেচনা করতে হবে।
তিনি বলেছেন, দেশে মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে সরকার সামাজিক সুরক্ষার আওতায় বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। টিসিবি’র মাধ্যমে ১ কোটি দরিদ্র পরিবারের মাঝে সাশ্রয়ী দামে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর কার্যালয়ে জাইকার নির্বাহী সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জুনিচি ইয়ামাদাসহ ৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করতে আসে। সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শরিফা খান উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের বাইরে না। সঙ্কট বিশ্বব্যাপী। সেই বিবেচনায় দেশ ভালো আছে। বৈশ্বিক অর্থনীতি বিবেচনায় রাখতে হবে সব সময়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির ওপর যে প্রভাব পড়েছিল, তা নিয়ে প্রথমদিকে আমরা কিছুটা ভয়ে ছিলাম। বর্তমানে সে ভয় অনেকটা কেটে গেছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ভালো আছে।
জাইকার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, জাইকার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তাদের অর্থায়নে বাংলাদেশে যেসব উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছিল, তার অগ্রগতি দেখার জন্যই এই টিমটি বাংলাদেশ সফরে এসেছে। ইতোমধ্যে তারা কয়েকটি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। মাতারবাড়ি প্রকল্পের কাজ প্রায় ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি ৫ শতাংশের কাজও দ্রুত শেষ হবে।
জাইকা নতুন কোনো প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছে কি না। এ প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, জাইকা আমাদের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী। তারা বাংলাদেশে সহায়তা বাড়াতে আগ্রহী। আমরা নতুন কোনো প্রস্তাব দিলে তা তারা বিবেচনা করবে।
বাজেট সহায়তা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ, তারা আমাদের বাজেট সহায়তা দিচ্ছে।
আইএমএফের কাছ নেওয়া ঋণ পরিশোধের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইএমএফ যে লোন দিয়েছে, তা শোধ করা কোনো ব্যাপারই না। তখন বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় লোনটা নিয়েছিলাম। আমাদের দুই মাসের রেমিট্যান্সের সমান তাদের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ। কাজেই এটা পরিশোধ করা কোন ব্যাপার না।
মূল্যস্ফীতি এবং কাঁচা মরিচের আকাশছোঁয়া দাম প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, আমরা যখন ক্ষমতায় আসি, তখন দেশে মূল্যস্ফীতি ছিল ১২.৩ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি এখন কি তার চেয়ে বেশি? আর মানুষ কি না খেয়ে মারা গেছে? কাঁচামরিচ একটি পচনশীল পণ্য, তার ওপর বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে এর ক্ষতি হয়েছে। বাজার চড়া হওয়ার ভয়ে কাঁচা মরিচ অনেকেই বেশি দামে কিনে রাখছে। কাঁচা মরিচ আমদানি হচ্ছে ধীরে ধীরে, দাম কমে আসবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সঙ্গে সাক্ষাৎ
এর আগে সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সঙ্গে দেখা করে জাইকার প্রতিনিধিদল।
পরে পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের প্রকল্প প্রক্রিয়ায় যে সময় লাগে, তাতে তাদের মাঝে-মধ্যে অসুবিধা হয়। একই ধরনের কাজ তাদের দেশে দ্রুত হয়ে যায়। তাদের মতো আমরা করতে পারি না। আমরা তাদের বুঝিয়েছি, আমাদের নিয়ম-কানুন আছে, এগুলো মানতে হয়। সংসদে জবাব দিতে হয়। আমরা এর মধ্যেও চেষ্টা করব প্রকল্পের কাজ দ্রুত করতে।
তিনি বলেন, তারা চলমান প্রকল্প ঘুরে দেখে এসেছে। বিশেষ করে, আড়াইহাজারের প্রকল্প। এটির কাজ দেখে তারা সন্তুষ্ট। আরও বেশি করে প্রকল্প প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে জাইকা। তাদের সম্পদ আছে, ইচ্ছাও আছে। তারা বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায়।
এম এ মান্নান বলেন, হলি আর্টিজানে তাদের নিহত নাগরিকদের স্মরণ করতে তারা এখানে এসেছে। আমিও তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি। এটি নিয়ে আমরা মর্মাহত। এমন কলঙ্কজনক ঘটনা যাতে না ঘটে, সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক থাকব।
জাইকা কোন ধরনের প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী? এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমি তাদের বলেছি, প্রথমত অবকাঠামো, দ্বিতীয়ত মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ। স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং অন্য খাতেও তাদের বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ।
এম এ মান্নান বলেন, তারা মানবসম্পদ উন্নয়ন, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন ও বড় বড় অবকাঠামো উন্নয়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাইকার নির্বাহী সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জুনিচি ইয়ামাদা বলেন, বাংলাদেশ সব সময় জাইকার কাছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। আমি কয়েকটি প্রকল্প পরিদর্শন করেছি। তা দেখে আমি সন্তুষ্ট। বিশেষ করে, ঢাকায় এমআরটি প্রকল্প, আড়াইহাজারে এসইজেড প্রকল্প, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প পরিদর্শন করেছি। অবকাঠামো উন্নয়ন এ দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জাইকা বাংলাদেশে অবকাঠামো উন্নয়নে আরও সহায়তা করতে চায়।
জাইকার সুদের হার বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সুদের হার বাড়ানো হয়েছে জাপান সরকারের সিদ্ধান্তে। আমার মতে, এটি করা হয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারের বিবেচনায়। শুধু বাংলাদেশ নয়, সব দেশের জন্যই সুদের হার বাড়িয়েছে জাইকা। এটি ঠিক করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বিবেচনায়।
Views: 5
Leave a Reply