সাকিব আল হাসান হাসছেন। ত্রিদেশীয় সিরিজে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ উইকেটে হারের পর পরিস্থিতি, পরিবেশ শান্ত রাখার চেষ্টা করছেন। পরাজয়ের বৃত্তে নিয়মিত ঘুরপাক খাওয়ায় এমন পরিস্থিতিতে বারবারই পরতে হচ্ছে তাকে। তাইতো বিশাল পরাজয়ের পরও নতুন কোনো অজুহাত খুঁজে পাননা অধিনায়ক।
বিবর্ণ ব্যাটিং, নির্বিষ বোলিং, আলগা মনোভাব, নিষ্প্রাণ লড়াই; ঘুরে-ফিরে হারের ব্যাখ্যায় এসবই বলা হচ্ছে। সাকিব হ্যাগলি ওভালের সবুজের গালিচায় দাঁড়িয়ে পুরোনো কথা নতুন করে শোনালেন, ‘আমরা ম্যাচে কখনোই ছন্দে ছিলাম না। ব্যাটিংয়ে এখনো আমাদের দুশ্চিন্তা কাটেনি। এখানে উন্নতির প্রয়োজন। এমন উইকেটে আমাদের কিভাবে বোলিং করতে হবে সেই উপায়ও খুঁজে বের করতে হবে।’
রেয়ার বাউন্ডারি! ইয়াসিরের ব্যাট থেকে একমাত্র চার আসার পর ধারাভাষ্যকার এভাবেই সেই বাউন্ডারির ব্যাখ্যা করছিলেন। কেন করবেন না? আগের ৩৯ বলে তো দলের কোনো ব্যাটসম্যানের ব্যাটে নেই বাউন্ডারি! এভাবেও তাহলে কি টি-টোয়েন্টি খেলা যায়? উত্তরটা না। কিন্তু এটাই বাংলাদেশের ব্রান্ড অব ক্রিকেট। শেষ ১৭ ম্যাচে এভাবেই টি-টোয়েন্টি খেলে আসছে বাংলাদেশ। যেখানে ১২০ বলের ইনিংসে গড়ে ৫০টিই ডট বল!
এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ১৩৭ রানের দলীয় ইনিংসে ডট বল কাঁটায় কাঁটায় ৫০টি। শেষে সোহানের ১২ বলে ২৫ রানের ইনিংসে আলোর ঝলকানি দেখা যায়। বাকিরা সবাই তো টিকে থাকার লড়াইয়েই ব্যস্ত। সাব্বিরকে সরিয়ে শান্তকে ওপেনিংয়ে ফেরালেও আহামরি কিছুই হয়নি। হ্যাঁ, দলীয় রান বেড়েছে। সেটাও ২৯ বলে ৩৩।
অথচ ইনিংসের অর্ধেক ওভার কাটিয়ে দেওয়ার পর শান্তর দায়িত্ব ছিল ইনিংস লম্বা করা, দ্রুত রান করা, প্রতি আক্রমণে রান বাড়ানো। সেগুলোর কোনো প্রতিফলনই নেই। এই ইনিংস খেলে অন্তত পরের ম্যাচে জায়গা পাবেন এতোটুকু নিশ্চিত করেই বলা যায়। বাংলাদেশের কোচ পরিবর্তন হলে বা নতুন কেউ এলে নতুন শব্দ ড্রেসিংরুমের অভিধানে যুক্ত হয়। এই যেমন, ডমিঙ্গোর কণ্ঠে শোনা যেত, ইনটেন্ট ক্রিকেট। সিডন্স আসার পর যোগ হয়, ফিয়ারলেস ক্রিকেট। টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরণ শ্রীরাম শুরুর দিনই বলে দেন, ইমপ্যাক্ট ক্রিকেট। কোনো কিছুতেই কোনো কাজ হচ্ছে না। এই ফরম্যাটে বাংলাদেশ এখনো ‘অ আ ক খ’ টাই শিখতে পারেনি। নয়তো ব্যবহৃত উইকেটে এমন ছন্নছাড়া ব্যাটিং কিভাবে সম্ভব?
আগের ম্যাচে একই উইকেটে খেলা হয়েছিল। পাকিস্তান সেই উইকেটের ফায়দা নিয়ে নিউ জিল্যান্ডকে অল্পরানে আটকে রাখে। আজ বাংলাদেশের একই পরিস্থিতি। পেসাররা সুবিধা নিতে পারেননি। কিন্তু স্পিনাররা জাল বিছিয়ে ছিলেন। এবারও মাঝের ওভারগুলোতে ডুবেছে আশার সূর্য। মিচেল ব্রেসওয়েল ৪ ওভারে ১৪ রানে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা।
ইশ সোধি শেষ ওভারে ২ ছক্কা হজম না করলে তার বোলিং স্পেলও বিশের ঘরে আটকা থাকত। ব্যাটিং যেমন-তেমন, ব্যাখ্যাতীত। বোলিংটাও যেন হারিয়ে ফেলা ভালোবাসা। অধারাবাহিক মোস্তাফিজকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ একাদশ সাজায়। দলে ঢুকেন শরিফুল। তার হাত ধরে তৃতীয় ওভারে ফিন অ্যালেনের উইকেট পায় বাংলাদেশ। যাওয়ার আগে ১৮ বলে ১৬ রান করেন ডানহাতি ওপেনার।
উইকেটের চারিপাশে দারুণ সব শট খেলে ডেভন কনওয়ে মুগ্ধতা ছড়ান। অফড্রাইভ, অনড্রাইভ, এগিয়ে এসে লং অফ দিয়ে ছক্কা সবকিছুই যেন ছকে কাটা ব্যাটিং, শিল্পীর তুলিতে রাঙা কোনো সৌন্দর্য। তার ৫১ বলে অপরাজিত ৭০ এ নিউ জিল্যান্ড জিতে যায় ১৩ বল হাতে রাখতেই।
তবে কিউইয়ের জয়ের সন্ধ্যা মলিন হয়ে যেতে নিয়েছিল গ্যালারিতে অনকাঙ্খিত এক ঘটনায়। গ্লেন ফিলিপসের এক ছক্কা দর্শকের মাথায় আঘাত করে। ক্রিজে থেকে সেই দৃশ্য দেখে মন পুড়ছিল ফিলিপসের। জয়ের জন্য তখন ৬ রান লাগত। শরিফুলের পরের বলে লং অন দিয়ে আরেকটি ছক্কা হাঁকিয়ে মিড উইকেটের দিকে ছুটে যান। বিলবোর্ডের বাধা টপকে ওই সমর্থকের পাশে দাঁড়ান কিউই ক্রিকেটার। যা উপস্থিত সবার মন কেড়ে নেয়।
দলের জয়, ফেলপেসের শেষ কাণ্ড নিউ জিল্যান্ডের হাসির কারণ। বাংলাদেশ মলিন মুখে মাঠ ছাড়লেও পরের ম্যাচে নতুন কিছুর আশায় মাঠে নামার ঘোষণাও দিয়েছে, ‘দুটি ম্যাচে পরপর হেরে স্বাভাবিকভাবেই পিছিয়ে থাকতে হয়। তবে বিশ্বকাপের আগে পরের দুই ম্যাচ আমাদের জন্য দারুণ কিছু হবে। খুব গুরুত্বপূর্ণ দুইটি ম্যাচ।’
Views: 3
Leave a Reply