বিএনপির আন্দোলনে রাজধানীতে একটি ট্রেনে দেওয়া আগুনে বাচ্চা-মাসহ চার জনের প্রাণহানির জন্য দলটিকে দায়ী করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যারা এই নাশকতা ঘটালো, তাদের ক্ষমা নেই।
তিনি বলেন, বিএনপির আন্দোলন হচ্ছে নাশকতার আন্দোলন, মানুষ পোড়ার আন্দোলন।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) রাজধানীতে আওয়ামী লীগের বিজয় শোভাযাত্রা উদ্বোধনের আগে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন কাদের।
এদিন দুপুরের পর শোভাযাত্রা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এর আগেই মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করেন নেতাকর্মীরা। বেলা ৩টার দিকে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স (কাকরাইল) থেকে মৎস্য ভবন, প্রেসক্লাব, ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইইবি), শাহবাগ লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে।
শোভাযাত্রায় ঢাকার নির্বাচনী আসনগুলোর নৌকার প্রার্থীরা নিজেদের প্রচারণা চালান। এ সময় নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। মহান বিজয় দিবসের এই র্যালিতে ফুঠে উঠেছে নির্বাচনী আমেজ আর প্রচার-প্রচারণা।
খেলা হবে, ছাড়াছাড়ি নাই
ওবায়দুল কাদের বলেন, খেলা হবে। ছাড়াছাড়ি নাই। খেলা চলবে। আওয়ামী লীগ খেলবে। ৭ তারিখে ফাইনাল। বিএনপি নাই। খবর নাই। একদফা ভুয়া, ভুয়া, বিএনপি ভুয়া, ২৮ দফা ভুয়া, ২৮ তারিখ ভুয়া। খাদে পড়ে গেছে। ১ হাজার ৮৯৬ জন মাঠে খেললে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। ২৭ দল মাঠে। তাহলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না যারা বলে, তারা ভুয়া। এরা বিএনপি দোসর।
এ সময় ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগানে পুরো এলাকা কাঁপিয়ে তোলেন দলের নেতাকর্মীরা।
৭০ ভাগ মানুষ শেখ হাসিনাকে ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ২৮ তারিখে লাল কার্ড খাইয়া বিএনপি বিদায় নিছে। বিএনপি ভুয়া, ধানের শীষ ভুয়া। বিএনপির নেতা নাই। আন্দোলন করবে কাকে নিয়ে? বিএনপির নেতা নাই, নির্বাচন করবে কাকে নিয়ে?’
বিএনপির আন্দোলন মানুষ পোড়ার আন্দোলন
মঙ্গলবার সকালে ট্রেনে আগুনসন্ত্রাসে চারটি তাজা প্রাণ ঝড়ে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আজ সকালে বাচ্চা মায়ের কোলে। বাচ্চাসহ ট্রেনে আগুনসন্ত্রাসে ট্রেনে চারটি তাজা প্রাণ ঝড়ে গেলো। এই দৃশ্য ইসরায়েলের যে হত্যাকাণ্ড শিশু নারী হত্যা, তা আজ বাংলাদেশে দেখলাম। রেলের ভেতর আগুন দিয়ে চারটি তাজা প্রাণ যারা হত্যা করেছে, তাদের ক্ষমা নাই। তাদের আন্দোলন নাশকতার আন্দোলন, মানুষ পোড়ার আন্দোলন।
এ সময় নাশকতার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থানের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, নাশকতার বিরুদ্ধে খেলা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, লুটপাটের বিরুদ্ধে খেলা হবে। হাওয়া ভবন করেছিল…আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে খেলা হবে।
জেলে বিএনপির নেতাকর্মী ৯ হাজার
২১ হাজার নেতাকর্মী কারাগারে রয়েছে বলে বিএনপি নেতাদের দাবি মিথ্যা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ২১ হাজার নাকি জেলে আছে। মিথ্যা কথা বলে। আমি চ্যালেঞ্জ করছি। জেলে আছে ১১ হাজার। এর মধ্যে আজকে জামিন পেয়ে ২ হাজার বের হয়ে গেছেন। থাকলো ৯ হাজার। ২১ হাজার ভুয়া। যারা মিথ্যাচার করে, তারা ভুয়া। বিএনপি ভুয়া। বিএনপি নেতাগুলো ভুয়া।
বিএনপির আন্দোলন আগামী বছর
এ সময় বিএনপি আন্দোলনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, অন্ধকার থেকে বক্তৃতা করে, ছবি তোলে। ১০-১২ জন নিয়ে মিছিল করে। এটা আন্দোলন! বিএনপির আন্দোলন ভুয়া। আগামী বছর আবার আন্দোলন হবে। এ বছর পারলো না, আগামী বছর আবার আন্দোলন শুরু হবে। রোজার ঈদ, কোরবানির ঈদ করে তারপর।
‘তারেক রহমান লন্ডনে আছে। তার সাহস নাই। থাকলে এখানে মোকাবিলা করতো। রাজপথে থাকতো। জেলে যেতো। জেলে যেতে যার ভয়, সে তো ভুয়া। তারেক রহমান ভুয়া। তার কথা ভুয়া। আন্দোলন আর হবে না।’
স্লোগানে স্লোগানে নৌকার ধ্বনি প্রতিধ্বনি
দেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে উল্লেখ করে বক্তব্যের এক পর্যায়ে স্লোগান ধরেন ওবায়দুল কাদের। এ সময় ‘সামনে আসছে ভালো দিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন’, ‘সামনে আসছে শুভ দিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন’, ‘নৌকা…নৌকা’ স্লোগানে পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে। এ সময় নেতাকর্মীদের মাঝে সৃষ্টি হয় ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা।
নির্বাচনে বাধা এলে প্রতিরোধ
নির্বাচন প্রতিরোধ করতে এলে জনগণকে নিয়ে তা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা ভোটে বাধা দেবে, ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা দেবে, যারা নির্বাচনে পরিবেশ নষ্ট করবে; তাদের মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচনমুখী, তারা প্রতিহত করবে। এদের প্রতিহত করে, পরাজিত করে, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা পঞ্চমবারের মতো বিজয়ের বন্দরেও পৌঁছাবে।
তিনি বলেন, তারা হাঁটু ভাঙা, মাঝা ভাঙা, কোমর ভাঙাদের দিয়ে জগাখিচুড়ির আন্দোলন করছে। এরা ভুয়া।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের এই বিজয় র্যালি ১৬ ডিসেম্বর করার পরিকল্পনা থাকলেও নির্বাচন আচরণবিধি বিবেচনায় নিয়ে ১৬ ডিসেম্বরের পরিবর্তে বিজয় দিবসের শোভাযাত্রা ১৮ তারিখ (সোমবার) করার কথা জানিয়েছিল দলটি। তবে কুয়েতের আমির শেখ নাওয়াফ আল-আহমাদ আল-জাবের আল-সাবাহর মৃত্যুতে সোমবার রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা দেওয়ায় শোভাযাত্রা পিছিয়ে মঙ্গলবারে নিয়ে যায়। সেজন্য ১৫ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অনুমতি চাওয়ার পাশাপাশি ঢাকার পুলিশ কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়েছিল দলটি।
Views: 14
Leave a Reply